ঢাকা: দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ছাপানো টাকা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি ব্যবহার করে ২২,৫০০ কোটি টাকা সহায়তা দিলেও সংকট কাটছে না। ব্যাংকগুলো এখন ঋণ আদায়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রায় সব সূচকেই অবনতি দেখা যাচ্ছে। গত জুনে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ১০,৩৯০ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরে নেমে এসেছে মাত্র ১৬১ কোটি টাকায়। তিন মাসে তারল্যের পরিমাণ কমেছে সাড়ে ৯৮ শতাংশ।
এছাড়া, জুন থেকে সেপ্টেম্বরে আমানতের স্থিতি কমেছে প্রায় ২ শতাংশ বা ৮৪২ কোটি টাকা। বিনিয়োগের হার সামান্য বেড়ে ০.৪২ শতাংশে দাঁড়ালেও, আমানত ও বিনিয়োগের অনুপাত ৩.৬৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্বল ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম এবং সুশাসনের অভাব এই সংকটের মূল কারণ। বিশেষ করে লুটপাটকৃত অর্থ বিদেশে পাচার হওয়া এবং ওই অর্থ আদায়ে ব্যর্থতা সংকটকে আরও তীব্র করেছে।
এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে খেলাপি ঋণ কমাতে এবং এর সংজ্ঞা কঠোর করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। প্রচলিত সংজ্ঞায় দেশে খেলাপি ঋণ বর্তমানে ২.৮৮ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। আগামী এপ্রিল থেকে আন্তর্জাতিক মানের সংজ্ঞা কার্যকর হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
দুর্বল ব্যাংকগুলোর সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে:
1. ‘প্রমোট করেক্ট্র অ্যাকশন প্ল্যান’ চালু: আগামী বছরের শুরুতে কার্যকর হতে যাচ্ছে। এর আওতায় নির্ধারিত সূচকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ ব্যাংকগুলোর ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
2. ব্যাংক একীভূতকরণ: ভালোভাবে পরিচালিত না হলে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সুশাসন নিশ্চিত হলে ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বাড়বে এবং সংকট মোকাবিলা সহজ হবে।
অর্থ পাচার বন্ধ এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তবে এটি সময়সাপেক্ষ এবং জটিল। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে জোর দিচ্ছে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের থেকে কিছু ঋণ আদায় সম্ভব হলেও, পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধার কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে।