নতুন বাংলাদেশে কোনো নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থাকবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “যেকোনো রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক হবে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। এই বাস্তবতা ভারতকেও মেনে নিতে হবে।” যমুনা টেলিভিশনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, “ভারতীয় গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার চলছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভুল বার্তা দিয়ে তাদের জনগণকে উত্তেজিত করা হচ্ছে। সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা এবং সীমান্তে প্রাণহানির পর ভারতের দুঃখ প্রকাশ এক ধরনের প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।”
তিনি অভিযোগ করেন, ভারতীয় গণমাধ্যম আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে। “ভারতীয় গণমাধ্যম আমাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে অনাস্থা তৈরির চেষ্টা করছে। অথচ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার এই পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের সময় থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। তারা নিজেদের সংখ্যালঘুবান্ধব সরকার হিসেবে প্রচার করলেও বাস্তবে তাদের দমন-পীড়নের কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।”
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “আমরা কোনও সংকট উড়িয়ে দিচ্ছি না। আমাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি অংশের মধ্যে অনিরাপত্তাবোধ রয়েছে, যা অতীতে রাজনৈতিকভাবে তৈরি হয়েছে। তবে খারাপ বা ভালো, এই দেশ আমাদের। আমাদের মিলেমিশে থাকতে হবে। কেউ বাইরে থেকে এসে আমাদের রক্ষা করবে না।”
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “ভারতীয় গণমাধ্যম এখন আওয়ামী লীগের ন্যারেটিভ বাস্তবায়ন করছে। আমরা ভারতকে বারবার অনুরোধ করেছি, এই ধরনের অপপ্রচার বন্ধ করতে। যখন বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে, তখন তাকে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়েও ভারতকে বলেছি।”
জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে দেশের সব ধর্ম ও মতের মানুষ আত্মত্যাগ করেছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম প্রশ্ন তোলেন, “সেসময় ভারতের গণমাধ্যম কেন সরব ছিল না? যখন আমাদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে, তখন কে হিন্দু, কে মুসলমান— সেটা দেখা হয়নি। এত সংখ্যালঘু মারা গেলো, তখন ভারত কোনো বার্তা দেয়নি। এখন তাদের হঠাৎ এই সক্রিয়তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
বাংলাদেশের সীমান্তে হত্যা বন্ধে ভারতকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “আমরা চাই ভারত বাংলাদেশের সাথে নতুন করে সমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলুক। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ হোক এবং কূটনৈতিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। আমরা নতুন বাস্তবতা অনুযায়ী এগোতে প্রস্তুত, ভারতকেও সেটি বুঝতে হবে।”
তরুণ এই উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, নতুন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে সমতা ও ন্যায্যতা প্রাধান্য পাবে, যা দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক হবে।