নিজস্ব প্রতিবেদক
অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল) থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। ঋণের নামে বিপুল অর্থ বের করে নেওয়া এবং অস্বাভাবিক দামে শেয়ার কিনে ব্যাংকটিকে ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলার অভিযোগও উঠেছে। ইউসিবিএলের অভ্যন্তরীণ তদন্তে এসব অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ চিঠি দিয়েছে ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ।
জানা যায়, ২০১৮ সালে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ইউসিবিএলের পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তার স্ত্রী রুখমিলা জামানকে চেয়ারম্যান এবং ভাই আনিসুজ্জামানকে নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন। এছাড়া চাচাতো ভাই আলমগীর কবীর অপুকে নিয়ম লঙ্ঘন করে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপরই শুরু হয় ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা।
বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের অভিযোগ অনুযায়ী, আদনান ইমামের কোম্পানি জেনেক্স এবং তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করা হয়। উল্লেখ্য, এসব ঋণের অনুমোদন দিতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কোনো সুপারিশ ছিল না এবং পর্যাপ্ত জামানতও রাখা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ঋণের একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
ইউসিবিএল অনিয়মের আরেকটি নজির হলো জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার কেনা। বোর্ড সদস্যদের অনুমোদনে লকড-ইনে থাকা ৬০ লাখ ৮৩ হাজার ৬২৬টি শেয়ার কেনা হয়। প্রতিটি শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৭২ টাকা ৫০ পয়সা। এর বিপরীতে ব্যাংকটি প্রায় ১০৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। তবে গত সেপ্টেম্বরে শেয়ারের দাম নেমে আসে মাত্র ৩৭ টাকায় এবং বর্তমানে তা আরও কমে ২৯ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এতে শেয়ার কেনার মাধ্যমে ব্যাংকটির লোকসানের পরিমাণ ৮৭ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, “ঋণ অনুমোদন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো গবেষণা বা বিশ্লেষণ না করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের শেয়ার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই ইনভেস্টমেন্ট অ্যানালাইসিস করা জরুরি। কিন্তু ইউসিবিএল-এর পরিচালনা পর্ষদে জাভেদ ও তার আত্মীয়রা একক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে এসব অনিয়ম করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “সাইফুজ্জামান চৌধুরী রাজনৈতিক প্রভাব ও ব্যাংকের মালিকানার শক্তি ব্যবহার করে ইচ্ছেমতো ঋণের নামে ব্যাংক থেকে অর্থ লুট করেছেন। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
ইউসিবিএলের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে দুদক। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকও তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জানান, “ব্যাংকের অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। একইসঙ্গে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”