ঢাকা, ১৬ ডিসেম্বর:
২০২৫ সালের শেষের দিকে বা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ড. ইউনূস বলেন, “নির্বাচন ব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সীমিত সংস্কার করলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন সম্ভব। তবে পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের জন্য ২০২৬ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।”
ড. ইউনূস ভাষণে ১৬ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “এই বিজয়ের দিনে আমরা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মত্যাগকারী শহীদদের স্মরণ করছি। তবে আমাদের অর্জনগুলো এখনও পূর্ণতা পায়নি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “মাত্র চার মাস আগে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে পৃথিবীর এক ঘৃণ্য স্বৈরাচারী শাসককে হটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে। আজ সেই ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে চলেছি।”
ভোটার তালিকা হালনাগাদকে প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, “গত ১৫ বছরে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত অনেক তরুণ এবার প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন। এই প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও নির্ভুল করতে হবে। পাশাপাশি ভুয়া ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কাজটিও নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এবারের নির্বাচনে নতুন ভোটাররা শতকরা ১০০ ভাগ ভোট দিয়ে একটি ঐতিহ্য গড়ে তুলুক—এই লক্ষ্য অর্জনে নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে।”
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভোট দেওয়ার একটি নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা চালু করতে চাই। এর মাধ্যমে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার বাস্তবায়িত হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছালে নির্বাচন অনুষ্ঠান আরও কার্যকর ও সুষ্ঠু হবে।”
ভাষণে তিনি স্পষ্ট করেন, “২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হতে পারে। তবে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার এবং জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে কাজ করলে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
ড. ইউনূসের এ বক্তব্য জাতিকে গণতন্ত্রের প্রতি নতুন আশার আলো দেখিয়েছে। তিনি তার ভাষণে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “জাতীয় ঐক্য অটুট থাকলে পৃথিবীর কোনো শক্তিই আমাদের লক্ষ্য অর্জন থেকে বাধা দিতে পারবে না।”