নয়াদিল্লি ও ঢাকা: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দাবি জানিয়েছেন ভারতের বিশিষ্টজনরা। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো বিভ্রান্তি দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিভেদ বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। বিশিষ্টজনদের মতে, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ নয়, বরং সাধারণ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে দিল্লিতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে ভারত বাংলাদেশের জন্য সব ধরনের ভিসা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধাক্কা লাগে।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে দৈনিক ৫-৬ হাজার পর্যটক যাতায়াত করলেও বর্তমানে এই সংখ্যা শতকের ঘরে নেমে এসেছে। বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে ভারতের পর্যটন খাত বড় ধরনের রাজস্ব হারাচ্ছে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ ফুয়াদ হালিম বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। সীমান্তের দুইপাশে ছোট-বড় ব্যবসায়ী এবং হোটেল, রেস্তোরাঁ, কৃষিপণ্য, এমনকি বিদ্যুৎ ও প্রকল্প কার্যক্রমেও এই সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বড় ব্যবসায়ীরা হয়তো সাময়িক ক্ষতি সামাল দিতে পারবেন, কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কয়েক মাসেও টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। তাই দ্রুত এই সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।”
সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েনে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা বন্ধ করার দাবি তোলা হয়েছে। তবে ভারতের বিশিষ্ট চিকিৎসকরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “চিকিৎসাসেবা বন্ধ করার দাবি মানবিকতার পরিপন্থি। চিকিৎসা কখনো রাজনৈতিক সংকটের অংশ হতে পারে না। আমরা চাই উত্তেজনা কমুক এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকুক।”
ভারতের বিশিষ্টজনরা মনে করেন, দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের বাংলাদেশ-নির্ভর ব্যবসা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এ প্রসঙ্গে ফুয়াদ হালিম আরও বলেন, “আমরা যদি দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্ব না দিই, তবে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাজনৈতিক সমাধান যত দ্রুত সম্ভব হওয়া দরকার।”
ভারতীয় বিশিষ্টজনদের এই আহ্বান সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে দুই দেশের সরকারের মনোযোগ ফেরাবে বলে আশা করা হচ্ছে।