ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুনকে মৌখিক নির্দেশে প্রত্যাহারের প্রতিবাদ জানিয়েছে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তারা অভিযোগ করেছেন, আল মামুনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বানোয়াট।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে সদরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কাজী বদিউজ্জামান, উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।
ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “সদরপুর ইউএনও আল মামুনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার সরাসরি বক্তব্য বা কর্মকাণ্ডে এমন কোনো প্রমাণ নেই যা অভিযোগকে সমর্থন করে। আমরা দাবি জানাই, আল মামুনকে পুনরায় তার কর্মস্থলে বহাল করা হোক এবং এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক।”
বক্তারা আরও বলেন, “কারও একতরফা অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো তদন্ত ছাড়াই একজন সরকারি কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া উচিত নয়। এটি একটি দুঃখজনক উদাহরণ স্থাপন করে। আমরা অবিলম্বে এই আদেশ বাতিলের দাবি জানাই।”
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবাদ
এর আগে, বুধবার রাতে সদরপুর উপজেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ইউএনও আল মামুনকে প্রত্যাহারের নির্দেশের প্রতিবাদ জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কাজী বদরুজ্জামান।
তিনি বলেন, “৩০ নভেম্বর সদরপুরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমাদের সামনেই ইউএনও আল মামুন বক্তব্য দেন। তবে তিনি কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক মন্তব্য করেননি। যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা মিথ্যা।”
উপজেলা জামায়াতের আমির দেলোয়ার হোসেন বলেন, “ইউএনও আল মামুন একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বানোয়াট। আমরা তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাই এবং তাকে পুনরায় স্বপদে বহাল করার দাবি জানাই।”
অভিযোগ ও প্রত্যাহারের প্রেক্ষাপট
সদরপুর ইউএনও আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আনিসুর রহমান। তিনি অভিযোগ করেন, “৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত স্মরণসভার পর ইউএনও আল মামুন আমাকে ডেকে কৌশলে বলেন, ‘আজ হোক বা কাল হোক, আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে (আওয়ামী লীগ উইল বি কাম ব্যাক, টুডে অর টুমোরো)’।”
এই অভিযোগের ভিত্তিতে জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান জেলা প্রশাসককে ইউএনও আল মামুনকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
মানববন্ধনে কঠোর অবস্থান
বৃহস্পতিবারের মানববন্ধনে বিএনপি ও জামায়াত নেতারা অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, “ইউএনও আল মামুনের বক্তব্যের কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ছাড়া তাকে সরানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।”
তারা আরও বলেন, “যদি এই ধরনের সিদ্ধান্ত প্রয়োগ অব্যাহত থাকে, তবে সরকারি কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ হ্রাস পাবে। এ ধরনের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে আমরা সবাই একসঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।”
সরকারি নির্দেশের প্রতিক্রিয়া
ইউএনও আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ও জনপ্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা এ ধরনের পদক্ষেপকে তাড়াহুড়ো এবং অন্যায় বলে অভিহিত করেছেন।
**উপ