নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পরিবেশ ও মানবাধিকার সংরক্ষণে অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “খেলার মাঠ মানে খেলার মাঠই। এখানে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হওয়া উচিত নয়।” শুক্রবার গুলশান সোসাইটি মসজিদের সামনে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধি ও গাড়ি চালকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজওয়ানা হাসান এ সময় ঢাকার পার্ক ও খেলার মাঠগুলোর ন্যায্য ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “পার্ক মানে হলো একটি উন্মুক্ত জায়গা যেখানে সবাই প্রবেশ করতে পারে। ঠিক তেমনই খেলার মাঠ হলো এমন একটি স্থান যেখানে শিশুরা নির্ভয়ে খেলতে পারবে। কিন্তু আমরা দেখছি, অনেক জায়গায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে, যা মাঠের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করছে।”
তিনি বিশেষভাবে ধানমন্ডির উদাহরণ টেনে বলেন, “ধানমন্ডির বেশ কয়েকটি খেলার মাঠ প্রাইভেট ক্লাবের নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হয়েছে। এই ক্লাবগুলো দাবি করে, সেখানে সকলের প্রবেশাধিকার আছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সবার জন্য তা উন্মুক্ত নয়। সেখানে প্রবেশ করতে টাকা দিতে হয়, যা মূলত মাঠ ব্যবহারের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে। খেলার মাঠ সবার জন্য ফ্রি থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।”
ঢাকার খালগুলো বাঁচানোর উদ্যোগ
শুধু খেলার মাঠ বা পার্ক নয়, পরিবেশ রক্ষায় ঢাকার খালগুলো বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। তিনি জানান, এ বিষয়ে কিছু এনজিওর কাছ থেকে ব্যয়সাশ্রয়ী পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ মাসের মধ্যেই একটি কার্যকর পরিকল্পনা হাতে আসবে।
তিনি বলেন, “খাল রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। সরকার পুরোপুরি এই কাজটি এককভাবে করতে পারবে না। এ জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। পার্ক বা খালের মতো পাবলিক স্পেসের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীকে নিতে হবে। তবে এই ব্যবস্থাপনার ফলে কারো অধিকার যাতে খর্ব না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।”
পার্ক-খেলার মাঠে সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, “পার্ক বা খেলার মাঠে সকলের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এসব জায়গায় কোনো ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ যাতে না ঘটে, তার জন্য যথাযথ নজরদারি থাকতে হবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই পার্ক বা মাঠে প্রবেশে বাধা দেওয়া যাবে না।”
তিনি মনে করেন, ঢাকার পার্ক ও খেলার মাঠগুলো ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে যেন তারা এই স্থানগুলো রক্ষায় উদ্যোগী হয়।
পাবলিক স্পেস ব্যবহারে সুশাসনের প্রয়োজন
শব্দ দূষণ রোধ এবং নগর পরিবেশের উন্নয়নে সুশাসনের ওপরও জোর দেন রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। যেমন, ধান চাষ কৃষক করবে, মাছ ধরা জেলেরা করবে। ঠিক তেমনি পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। গুলশানের বাসিন্দারা যদি পার্ক ব্যবস্থাপনায় নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন, তবে এটি আরও কার্যকর হবে।”
তিনি মনে করিয়ে দেন, পাবলিক স্পেস ব্যবস্থাপনার জন্য জনগণের করের অর্থ ব্যবহার করা হয়। সুতরাং, এই স্থানগুলোর সুবিধা সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিয়ে অন্যদের বঞ্চিত করা যাবে না।
পরিবেশ রক্ষায় দায়িত্বশীলতার আহ্বান
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তার বক্তব্যে নাগরিকদের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “পরিবেশ রক্ষার কাজ কোনো একক ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের নয়। এটি আমাদের সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব। পার্ক, মাঠ, খাল এবং অন্যান্য পাবলিক স্পেস আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে হবে।”
এ সময় তিনি আরও জানান, ঢাকার পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। উন্নত পরিকল্পনার মাধ্যমে শহরটিকে বসবাসযোগ্য করে তোলাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।