ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সনদধারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি স্বেচ্ছায় সনদ প্রত্যাহারের সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম আজ (১১ ডিসেম্বর) ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, যারা নিজের ভুল স্বীকার করে সনদ প্রত্যাহার করবেন, তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। তবে যারা এ সুযোগ গ্রহণ করবেন না, তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফারুক ই আজম বলেন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীরা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছেন। বিশেষ করে যারা এই সনদ ব্যবহার করে সরকারি চাকরি নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে যাচাই-বাছাই শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রমাণিত হলে চাকরি থেকে অব্যাহতি ও আইনি শাস্তি কার্যকর হবে।
তিনি আরও জানান, “মুক্তিযোদ্ধাদের নামের অপব্যবহার দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অবমাননা। তাই এ ধরনের কার্যক্রমে জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন, তাদের সুবিধা নেওয়ার অধিকার নেই।”
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা দেশের রাজাকারদের তালিকা তৈরির জটিলতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, “রাজাকারদের তালিকা তৈরি অত্যন্ত কঠিন কাজ। এ কাজে অগ্রগতি এখনো শূন্যের কোঠায় রয়েছে। তবে এই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য আন্তরিক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) গঠিত হয়েছে এবং তাদের সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তবে রাজাকারদের বিষয়ে যথাযথ তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করার প্রয়োজন রয়েছে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী কাজ।”
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণের সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। আমরা একটি যৌক্তিক সংজ্ঞা চূড়ান্ত করতে কাজ করছি। যারা সত্যিকারের যুদ্ধ করেছেন এবং যারা নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধকে সহযোগিতা করেছেন, তাদের সবার যথাযথ মূল্যায়ন নিশ্চিত করা হবে।”
উপদেষ্টা আরও জানান, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ের অংশগ্রহণকারীদের সম্মান দেওয়া উচিত। বিশেষত, যারা মাঠপর্যায়ে যুদ্ধ করেছেন, তাদের মর্যাদা সংরক্ষণ করে একটি সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হবে।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের চিহ্নিত করতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ চলছে। যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং ভুয়া সনদধারীদের আলাদা করা হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ফারুক ই আজম বলেন, “যারা ভুয়া সনদধারী, তারা দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড মুক্তিযোদ্ধাদের নৈতিকতা এবং তাদের আত্মত্যাগের প্রতি অবমাননা। তবে স্বেচ্ছায় সনদ প্রত্যাহারের মাধ্যমে তাদের সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হবে।”
রাজাকার ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সনদধারীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দীর্ঘমেয়াদী কৌশল গ্রহণের পরিকল্পনা করছে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সংরক্ষণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ নেবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় সঠিক নীতিমালা নির্ধারণ এবং কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জাতির সম্মান প্রকাশ পাবে।
১. ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের স্বেচ্ছায় সনদ প্রত্যাহারে সাধারণ ক্ষমা।
২. ভুয়া সনদধারীদের চাকরি থেকে অব্যাহতি ও আইনি শাস্তি।
৩. রাজাকারদের তালিকা তৈরির কাজ জটিল এবং অগ্রগতি শূন্যের কোঠায়।
৪. মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে সঠিক ও ন্যায্য সংজ্ঞা নির্ধারণের পরিকল্পনা।
৫. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা সংরক্ষণে সরকারের নতুন পদক্ষেপ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এই ধরনের উদ্যোগ দেশের জাতীয় ইতিহাস ও মর্যাদা সংরক্ষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।