ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে সম্পর্কের টানাপোড়ন গভীরতর হচ্ছে। এরই মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) এক বক্তব্যে তিনি বলেন, “শান্তির জন্য নোবেল পাওয়া এই ব্যক্তি তার নিজের দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ। এমন একজন ব্যক্তিকে নোবেল পুরস্কার দেয়া কতটা যৌক্তিক, তা প্রশ্নবিদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে নোবেল জয়ী ইউনূসের ভূমিকা হাস্যকর। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ওপার বাংলার মানুষের কাছে বরাবরই প্রিয় ছিল। কিন্তু কিছু মৌলবাদী গোষ্ঠী সন্ত্রাস সৃষ্টি করে দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক নষ্ট করছে।”
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ এবং ইসকন নেতা চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারের ঘটনায় দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও অবনতি হয়েছে। ত্রিপুরার আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ত্রিপুরা এবং কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনারদের অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়। ইতোমধ্যেই তারা ঢাকায় যোগদান করেছেন।
ভারতও হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তারসহ তিন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করেছে।
হাইকমিশনে হামলার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। কলকাতা ডেপুটি হাইকমিশনে ভারতীয়দের জন্য ভিসা সীমিত করেছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) এক গোপন নোটিশের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। এটি দুই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমশ হিমশীতল হয়ে পড়েছে। সংখ্যালঘু ইস্যু এবং কূটনৈতিক উত্তেজনা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য দুই দেশের নেতাদের মধ্যস্থতা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু ইস্যুতে সংবেদনশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া এই উত্তেজনা প্রশমিত করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।