ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হামলা কূটনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এই হামলার পর বাংলাদেশ সরকার কনস্যুলার সেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, যদিও উভয় পক্ষ শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপর জোর দিচ্ছে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আগরতলার সহকারী হাইকমিশনে সকল ধরনের কনস্যুলার সেবা কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, “নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
হাইকমিশন থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ভিসা ও কনস্যুলার সেবা বন্ধ থাকবে।” এর ফলে আগরতলা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা বাংলাদেশের ভিসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
হামলার সূত্রপাত হয় আগরতলার স্থানীয় একটি সংগঠনের বিক্ষোভ থেকে। অভিযোগ রয়েছে, হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির কর্মীরা সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে মিশনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এ সময় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করা হয় এবং হাইকমিশনের সম্পত্তি ভাঙচুর করা হয়।
বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, এই আক্রমণ “পূর্বপরিকল্পিত” ছিল। মিশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ঢাকা।
হামলার পরপরই ভারতের প্রশাসন বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়। আগরতলা পুলিশ সাতজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার জন্য তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং এক উপ-পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
যেসব ব্যক্তিদের আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন ঝুতন দাস, উজ্জ্বল দাস, দীপ্তনীল ভৌমিক, সুরজা দাস, ঝুলন মালাকার, প্রদীপ সাহা এবং অলক মজুম।
হামলার ঘটনার পর বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করা হয়। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “দুই দেশের সম্পর্ক বহুমাত্রিক এবং একটি ঘটনার কারণে তা আটকে থাকবে না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে শান্তি ও সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্ক রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “এই আক্রমণ ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশন, ১৯৬১ লঙ্ঘন করেছে।”
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক এই হামলা এবং কলকাতায় একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দুই দেশের মধ্যে আস্থা সংকটের সৃষ্টি করেছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।
এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের স্থিতিশীলতার জন্য একটি পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারকে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের উচিত কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এ ধরনের ঘটনা যদি বারবার ঘটে, তবে তা দুই দেশের মধ্যকার ইতিবাচক সম্পর্কের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।”
আগরতলার সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা কেবল দুটি দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনার বিষয় নয়; এটি আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। দুই দেশের সরকারের উচিত এমন পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।