স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পার্শ্ববর্তী দেশের গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচারের অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “ইসকন নিয়ে দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নেই, কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশের মিডিয়া আমাদের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে।”
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুরে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এসব কথা বলেন। সাঈদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি আরও বলেন, “মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সত্য প্রকাশের মাধ্যমে এসব মিথ্যা বন্ধ করতে হবে।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি ইসকন নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না, তা নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, “ইসকন নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা হয়েছে কি না, তা আমি জানি না। যদি পরিকল্পনা হয়, তাহলে সময়মতো জানতে পারবেন। তবে ইসকন নিয়ে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, “যারা মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে, তাদের মুখে চুনকালি পড়বে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আপনারা সত্য তথ্য প্রচার করুন, যাতে মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধ হয়।”
শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, “এ মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব মামলার শুনানি শুরু হবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ অন্য আসামিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এবং অপরাধীরা শাস্তি পাবে।”
তিনি আরও জানান, মামলাগুলোর সঠিক তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এই কমিটিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং লিগ্যাল এইড অফিসার থাকবেন। তারা তদন্তের মাধ্যমে নির্দোষ ও দোষীদের আলাদা করবেন। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং নির্দোষদের মুক্তি দেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পর যারা মিথ্যা মামলা করেছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে, যারা সেসব মামলা তদন্ত করবে। তদন্তের পরই সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মতে, পার্শ্ববর্তী দেশের কিছু মিডিয়া উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। তিনি বলেন, “তাদের মিথ্যা প্রচারণার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যেসব মিডিয়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাদের প্রতিহত করতে আমাদের সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। সত্য তথ্যের মাধ্যমে এসব মিথ্যা প্রচারণাকে পরাজিত করা সম্ভব।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “পুলিশ এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমের ফলে আগের তুলনায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে আরও সময় এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি সাধারণ জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও ভালো হবে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, পার্শ্ববর্তী দেশের গণমাধ্যমের মিথ্যা প্রচারণা শুধু বাংলাদেশকে নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেও হুমকির মুখে ফেলছে। এ ধরনের প্রচারণা বন্ধ করতে গণমাধ্যমের সতর্কতা এবং সত্য প্রচারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, সরকার এ ধরনের প্রচারণা রোধে সক্রিয় ভূমিকা নিতে চায়। তবে এর জন্য গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাধারণ জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন।
পার্শ্ববর্তী দেশের মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণা এবং ইসকন ইস্যুতে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মিথ্যা প্রচারণা বন্ধে সাংবাদিকদের সহযোগিতার আহ্বান এবং আইনি প্রক্রিয়ার অগ্রগতির প্রতিশ্রুতি জনগণের মধ্যে আস্থা বাড়াবে। একই সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং সঠিক বিচার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কার্যক্রম প্রশংসার দাবিদার।