রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের (ডিপিআর) পেত্রোভকা এবং ইলিনকা অঞ্চল মুক্ত করেছে বলে জানিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিপুল ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। রোববার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
রুশ বাহিনীর ব্যাটলগ্রুপ সাউথ ও ব্যাটলগ্রুপ সেন্টার যৌথভাবে ইলিনকা এবং পেত্রোভকা অঞ্চল দখলমুক্ত করেছে। অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সময় ভয়াবহ সংঘর্ষে ইউক্রেনের পাঁচ শতাধিক সেনা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
রুশ বাহিনী তাদের সামরিক অভিযানে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ব্যাটলগ্রুপ ইস্ট ডিপিআরের ভেলিকায়া নোভোসেলকা, রাজলিভ, এবং নোভি কোমার এলাকায় ইউক্রেনের ৩২তম মেকানাইজড ব্রিগেড এবং ২৪১তম টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স ব্রিগেডকে পরাস্ত করেছে।
অন্যদিকে, ব্যাটলগ্রুপ ওয়েস্ট ইউক্রেনের ১৪তম মেকানাইজড ব্রিগেড, ৩য় ট্যাংক ব্রিগেড এবং ১১৩ ও ১১৭তম টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স ব্রিগেডের ১১টি পাল্টা আক্রমণ প্রতিহত করেছে।
খারকভ অঞ্চলে ব্যাটলগ্রুপ নর্থ ইউক্রেনের ৯২তম এয়ারবর্ন ব্রিগেড এবং ৫৭তম ও ৫৮তম মেকানাইজড ব্রিগেডের দুইটি পাল্টা আক্রমণ ব্যর্থ করেছে।
ডিপিআর ছাড়াও খারকভ অঞ্চলে রুশ ব্যাটলগ্রুপ দিনিপ্রের হামলায় ৮৫ জন ইউক্রেনীয় সেনা, ৩টি যানবাহন, একটি বৈদ্যুতিক যুদ্ধ স্টেশন এবং ২টি অস্ত্রাগার ধ্বংস করা হয়েছে।
রুশ বাহিনী ইউক্রেনের সামরিক বিমানবন্দর, ড্রোন তৈরির কারখানা এবং ১৩৬টি স্থানে শত্রু সেনা ও সরঞ্জাম লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, এসব হামলায় ইউক্রেনীয় সামরিক অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৫৫টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে। বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের ৬৪৯টি বিমান, ২৮৩টি হেলিকপ্টার, এবং ৩৭,০১৩টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে বলে মস্কোর দাবি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডিপিআরের এসব অঞ্চলে রুশ বাহিনীর অগ্রগতি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ইউক্রেনীয় বাহিনীর দাবি অনুযায়ী, এসব অঞ্চলে সংঘর্ষ এখনও চলছে এবং রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
কিয়েভ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইউক্রেনীয় সামরিক কর্মকর্তারা বলেছেন, রুশ বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির হিসাব বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে এবং তারা কয়েকটি অঞ্চলে পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনা করছে।
রুশ সামরিক অভিযানের সাফল্য নিয়ে মস্কোতে উল্লাস দেখা দিলেও পশ্চিমা দেশগুলো এই সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
ডিপিআরের পেত্রোভকা ও ইলিনকা অঞ্চলে রুশ বাহিনীর অগ্রগতি বিশেষ সামরিক অভিযানের কৌশলগত মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির এই ধারা কেবল যুদ্ধক্ষেত্রকেই অস্থিতিশীল করছে না, বরং এটি বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। যুদ্ধের এই অবস্থা সমাধানের জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন, তা না হলে সংঘাত আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।