২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামি হাইকোর্ট থেকে খালাস পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই রায়ে প্রমাণ হলো বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তারেক রহমানকে জড়িত করেছিল। বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে উচ্চ আদালত ন্যায়বিচারের স্বাক্ষর রেখেছে।”
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় ২৪ জন নিহত ও ৩০০ জনের বেশি আহত হন। আওয়ামী লীগ এই হামলার জন্য তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে দায়ী করে। মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে।
২০১৮ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এ মামলার রায় ঘোষণা করে। ওই রায়ে তারেক রহমানসহ বিএনপি এবং উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন নেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
চার বছর পর, ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর, হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মামলাটি পুনর্বিবেচনা করে। রায়ে তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উত্থাপিত আপিল শুনানির পর উচ্চ আদালত এ সিদ্ধান্ত নেয়।
রায়ের পর যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, “মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই রায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকে মিথ্যা ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো আওয়ামী লীগ সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিচারিক আদালতের রায় ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে দমনের কৌশল হিসেবে তারেক রহমানকে মামলাটিতে জড়ানো হয়েছিল।”
বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, দলীয় নেতাকর্মীরা রায়ের খবর শুনে উচ্ছ্বসিত।
তারেক রহমানের আইনজীবীরা রায় নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, মামলার নথিপত্রে উল্লেখিত প্রমাণের অভাবে উচ্চ আদালত এই রায় দিয়েছে। “এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। এটি প্রমাণ করে যে তারেক রহমান কোনোভাবেই এই ঘটনায় জড়িত ছিলেন না,” বলেন প্রধান আইনজীবী।
বিএনপির পক্ষ থেকে রায়কে স্বাগত জানানো হলেও আওয়ামী লীগ এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “হাইকোর্টের রায় নিয়ে আমরা হতাশ। এই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করব।”
রায় ঘোষণার পর সাধারণ মানুষ ও বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ রায়কে ন্যায়বিচারের বিজয় বলে প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ সমালোচনা করে বলেছেন, এটি একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত।
এই রায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রায়ের ফলে বিএনপি তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ এই রায়ের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে জনগণের সমর্থন ধরে রাখতে চেষ্টা করবে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা নিয়ে দীর্ঘ ২০ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর উচ্চ আদালতের রায় নতুন রাজনৈতিক ও বিচারিক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। রায় বিএনপিকে কিছুটা স্বস্তি এনে দিলেও, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই রায়ের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।