বুধবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হলো বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ। বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবীর খান জানিয়েছেন, দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও সিরাজগঞ্জে থাকার কারণে তিনি অংশ নিতে পারেননি।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই বৈঠক এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ক্রমশ বাড়ছে। একদিকে বর্তমান সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, অন্যদিকে আসন্ন নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে জনমনে নানা শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত, বিরোধী দলের দাবি অনুযায়ী একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে জোর দাবি উঠেছে। এরই মধ্যে ড. ইউনূস বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
যদিও বৈঠকের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা সম্পর্কে কোনো পক্ষই সরাসরি কিছু জানায়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে কীভাবে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করা যায়, তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। বিশেষত, ড. ইউনূসের মতো একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এ ধরনের আলোচনা, ভবিষ্যতে কোনো কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করতে এবং আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায়ে বিএনপি যে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে, এই বৈঠক তারই অংশ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ড. ইউনূসের মতো একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আলোচনা বিএনপিকে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে। বিশেষত, যেহেতু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ড. ইউনূসের বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তাই তার মতামত বা মধ্যস্থতাও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
এই বৈঠক নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কী প্রতিক্রিয়া আসবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এর আগে ড. ইউনূসের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। এ ধরনের বৈঠক ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিএনপির উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ককে আরও তীব্র করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি ও ড. ইউনূসের এই বৈঠক আসন্ন নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে নতুন মাত্রা দিতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস একটি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারেন। তবে এ ধরনের উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে উভয় পক্ষের আন্তরিকতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকার ওপর।
সাধারণ জনগণের মধ্যে এ বৈঠক নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে। আবার অনেকেই এ বৈঠককে শুধুমাত্র একটি প্রতীকী উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন।
যমুনায় অনুষ্ঠিত বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই বৈঠক দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বৈঠক থেকে কী সিদ্ধান্ত আসবে এবং তা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কতটা প্রভাবিত করবে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে এটি স্পষ্ট যে, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও নির্বাচনী পরিবেশে এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।