রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নে একই সময়ে দুই স্বামীর সঙ্গে সংসার করছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। এই ঘটনা জানাজানি হলে পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। প্রায় দুই বছর ধরে দুই স্বামীর সঙ্গে গোপনে সংসার করার পর বিষয়টি ফাঁস হলে ঘটনা স্থানীয় পর্যায় থেকে দেশজুড়ে আলোচনায় আসে। একাধিক স্বামীর সঙ্গে সংসারের এই ঘটনা সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে।
প্রথম বিয়ে: প্রেম থেকে হলফনামায় বিয়ে
জানা গেছে, চার বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে হলফনামার মাধ্যমে বিয়ে করেন ইউটিউবার সাগর শেখ এবং জান্নাতুল ফেরদৌস। সাগরের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামে। অন্যদিকে জান্নাতুলের বাড়ি আলীপুর গ্রামে।
বিয়ের পর জান্নাতুল তার বাবার বাড়িতেই বসবাস করতেন। কারণ তার বাবা, মা ও ভাই প্রবাসে থাকতেন। তবে জান্নাতুলের বাবার প্রবাস থেকে দেশে ফেরার পর থেকে সাগরের শ্বশুরবাড়িতে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়।
দ্বিতীয় বিয়ে: পারিবারিক চাপের অজুহাত
এ সময় জান্নাতুল প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে পারিবারিক সিদ্ধান্তে অন্য এক যুবককে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পরেও তিনি প্রথম স্বামী সাগরের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রায় দুই বছর ধরে দুই স্বামীর সঙ্গে এই গোপন সংসার চলতে থাকে।
সাগরের অভিযোগ, জান্নাতুল তাকে আশ্বস্ত করতেন যে তিনি দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে শুধু পারিবারিক চাপে বিয়ে করেছেন এবং তার সঙ্গে কোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নেই। কিন্তু বাস্তবে তিনি দুই স্বামীর সঙ্গেই নিয়মিত সময় কাটাতেন।
দুই বিবাহবার্ষিকী পালন ও প্রতারণার অভিযোগ
সাগরের দাবি, ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর জান্নাতুলের সঙ্গে তাদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী পালন করেন। কিন্তু মাত্র দুই দিন পর তিনি জানতে পারেন যে জান্নাতুল তার দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে রয়েছেন এবং নিয়মিত তার বাবার বাড়িতে সময় কাটাচ্ছেন। এই খবর পেয়ে সাগর ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং জান্নাতুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন।
তবে জান্নাতুল তাকে গালাগাল করে সাফ জানিয়ে দেন, তিনি সাগরের সঙ্গে আর সংসার করতে চান না। বাধ্য হয়ে সাগর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেন এবং পরে রাজবাড়ী আদালতে মামলা করেন।
সাগরের অভিযোগ: প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ
সাগরের অভিযোগ, জান্নাতুল তাকে প্রতারণা করেছেন। তিনি বলেন, “আমাকে ডিভোর্স না দিয়েই আমার স্ত্রী অন্য একজনকে বিয়ে করেছে। একই সঙ্গে দুই স্বামীর সঙ্গে সংসার করেছে, যা আইন ও ধর্মের বিরোধী।”
সাগরের আরও দাবি, জান্নাতুলের জন্য তিনি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। এখনো তিনি তার স্ত্রীকে ফিরে পেতে চান কারণ তিনি তাকে ভালোবাসেন।
দ্বিতীয় স্বামীর বক্তব্য
জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে তিনি দাবি করেন, জান্নাতুলের সঙ্গে সাগরের সম্পর্ক ছিল প্রেম পর্যন্ত। বিয়ের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না।
পরিবারের ভূমিকা ও বিভ্রান্তি
জান্নাতুলের মা হাসিনা বেগম জানান, জান্নাতুল ও সাগরের বিয়ের পর দুই মাসের মধ্যে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। তবে ডিভোর্সের কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলার কারণে বিষয়টি প্রমাণ করা যাচ্ছে না। তিনি আরও দাবি করেন, জান্নাতুল সাগরের চাপে তার সঙ্গে এতদিন সময় কাটাতে বাধ্য হয়েছে।
অন্যদিকে, জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামীর পরিবার জানায়, বিয়ের আগে তারা জান্নাতুলের অতীত সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছিলেন। তখন তারা সাগরের সঙ্গে জান্নাতুলের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানতে পারেন।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বক্তব্য
আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কার ছিদ্দিক জানান, সাগর তার ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, জান্নাতুল সাগরকে ডিভোর্স না দিয়েই দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন এবং দুই স্বামীর সঙ্গেই সংসার করেছেন।
তিনি বলেন, “এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। আমাদের সমাজে সাধারণত নারীরা নির্যাতিত হয় বলে ধারণা থাকলেও এই ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে যে ছেলেরাও নির্যাতনের শিকার হতে পারে। এ ধরনের ঘটনা সমাজে আর যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করা উচিত।”
আইনগত পদক্ষেপ ও সমাধান
সাগর তার স্ত্রীকে ফেরত পেতে আইনি লড়াই শুরু করেছেন। তিনি ১৭ নভেম্বর রাজবাড়ীর ১নং আমলি আদালতে মামলা করেন। এদিকে জান্নাতুল এবং তার পরিবার বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান করতে চান।
সমাজে প্রতিক্রিয়া
জান্নাতুলের দুই স্বামীর সঙ্গে সংসারের ঘটনা এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে ঘটনাটিকে অনৈতিক ও প্রতারণামূলক বলে আখ্যা দিয়েছেন।
সমাপ্তি ও ভবিষ্যৎ সংকট
জান্নাতুলের প্রথম স্বামী সাগর এখনো তাকে ফেরত পেতে চাইলেও জান্নাতুল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সাগরের সঙ্গে আর সংসার করবেন না। বিষয়টি নিয়ে আদালত ও প্রশাসনের পদক্ষেপের পরই এর চূড়ান্ত সমাধান হতে পারে।
এই ঘটনায় সমাজে সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার সামনে এসেছে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে সততা এবং আইন মেনে চলার গুরুত্ব নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে সবাইকে।