জেলে বন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের এক ডাকে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার জনতা। তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থকরা বিভিন্ন প্রদেশ থেকে রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে রওনা হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পাকিস্তান সরকার ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন সেবা বন্ধ করে দিয়েছে এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ইমরানের ‘চূড়ান্ত ডাক’
১৩ নভেম্বর ইমরান খান দেশব্যাপী বিক্ষোভের ঘোষণা দেন এবং রাজধানী ইসলামাবাদে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান। তার অভিযোগ, দেশের জনগণের ম্যান্ডেট চুরি, অবৈধ গ্রেপ্তার এবং ২৬তম সংশোধনী পাস করে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে তিনি জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।
এরপর ২৪ নভেম্বরের বিক্ষোভকে সামনে রেখে পিটিআই সমর্থকরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। দলটির দাবি, এই বিক্ষোভই হবে সরকারবিরোধী ‘চূড়ান্ত আন্দোলন’।
সরকারের কঠোর অবস্থান
বিক্ষোভ দমনে পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেছে এবং কোনো ধরনের সমাবেশ অনুমোদন না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পাঞ্জাব রাজ্যে তিন দিনের জন্য ১৪৪ ধারা কার্যকর করা হয়েছে এবং ১০ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইসলামাবাদগামী বিভিন্ন সড়ক ব্লক করা হয়েছে।
তবে, ইমরান খানের সমর্থকরা প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, কোনো বাধাই তাদের থামাতে পারবে না। তাদের বিশ্বাস, এই বিক্ষোভই হবে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের লড়াই।
বুশরা বিবির আহ্বান
ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি ভিডিও বার্তায় দলের সমর্থকদের বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “২৪ নভেম্বরের বিক্ষোভ কোনোভাবেই পরিবর্তন হবে না। এটিই চূড়ান্ত ডাক।” তার বক্তব্য পিটিআই সমর্থকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।
নেতৃত্বহীন বিক্ষোভ
পিটিআইয়ের বেশিরভাগ শীর্ষ নেতা কারাগারে বন্দি থাকায় বিক্ষোভের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে, দলটি জানিয়েছে, কোনো নির্দিষ্ট নেতা না থাকলেও সমর্থকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভে অংশ নেবেন।
উত্তেজনা ও আশঙ্কা
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিলে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আরও গভীর হতে পারে। বিশেষ করে, ইমরান খানের ‘চূড়ান্ত ডাক’ এবং সরকারের কঠোর পদক্ষেপ দেশের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, ২৪ নভেম্বর পাকিস্তানের ইতিহাসে আরেকটি অভ্যুত্থানমূলক পরিস্থিতি তৈরি করবে কি না। বিশ্লেষকরা এমন সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, আর এই উত্তাল পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে শেষ হবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।