ঢাকা, ২৪ নভেম্বর:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে ১২ দিনের লড়াই শেষে চিরবিদায় নেন সেলিম তালুকদার। জীবন উৎসর্গ করলেও তিনি জানতে পারেননি, তার রক্তের উত্তরাধিকার গর্ভে রেখে গেছেন স্ত্রী সুমী আক্তার।
১৮ জুলাই বাসা থেকে বের হওয়ার আগে স্ত্রী সুমীর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করানো হয়েছিল। তবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সেলিম আর জানতে পারেননি তিনি বাবা হতে চলেছেন। তার মৃত্যুপরবর্তী সময়ে সুমীর গর্ভাবস্থা নিশ্চিত হয়।
হাসপাতালে ভর্তি করাতে পুলিশের হয়রানি
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পরিবারকে ১২ ঘণ্টা ধরে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরতে হয়। শেষমেশ ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় সেলিমকে। সেখানে লাইফ সাপোর্টে থাকাকালীন ১ আগস্ট তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সেলিমের বাবা সুলতান তালুকদার বলেন, “একমাত্র ছেলেকে হারালাম, তাকে বাঁচাতে পারলাম না। মৃত্যুর সনদও নিতে হয়েছে পুলিশের শর্তে, যেখানে স্বাভাবিক মৃত্যুর কথা লিখতে বাধ্য করা হয়েছে।”
সেলিম তালুকদার, ঝালকাঠির নলছিটির সন্তান। বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে মাল্টিফ্যাবস লিমিটেডে চাকরি করতেন। তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে যোগ দেন তিনি।
১৮ জুলাই সকালে বাড্ডার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মা সেলিমা বেগম তাকে নাস্তা খেয়ে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু নাস্তা না খেয়েই বের হন সেলিম। এরপর স্ত্রীর ফোনে খবর আসে, সেলিম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
২ আগস্ট ঝালকাঠির নলছিটির পারিবারিক কবরস্থানে সেলিমকে সমাহিত করা হয়। তার স্মরণে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা নলছিটি শহরের ‘বিজয় উল্লাস ৭১’ চত্বরের নামকরণ করেন ‘শহীদ সেলিম তালুকদার স্মৃতি চত্বর’।
স্বামীর অনুপস্থিতিতে সন্তানকে কেন্দ্র করেই জীবনের মানে খুঁজছেন সুমী আক্তার। তিনি জানান, “আমি স্বামীর হত্যার বিচার চাই। তবে কবর থেকে মরদেহ তোলা বা ময়নাতদন্ত হোক, তা চাই না। নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে সন্তানের দায়িত্ব নেব।”
সুমী আক্তার আরও বলেন, “বিবাহবার্ষিকীতে চট্টগ্রামে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। স্বামী আমাকে চমক দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তার মুখে সবসময় কন্যা সন্তানের আশা শুনতাম।”
সেলিমের মা সেলিমা বেগম বলেন, “ছেলে প্রতিদিন নাস্তার তাড়া দিতাম। এখন শুধু তার অনাগত সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষা।”
শহীদ সেলিম তালুকদার: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মর্মান্তিক ইতিহাসের অংশ
সেলিম তালুকদারের আত্মত্যাগ ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এই শহীদের জীবন পরিবার ও সমাজের জন্য এক বেদনাবিধুর স্মৃতি।