ঢাকা: রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন—ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ (ডিএসসিসি)—নাগরিক সেবা প্রদানে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ কিংবা চারিত্রিক সনদের মতো প্রয়োজনীয় সেবা পেতে এখন নাগরিকদের ভুগতে হচ্ছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ক্ষেত্রেও অনিয়ম ও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটির ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাকপ্রতিবন্ধী নৃত্যশিল্পী সানজিদা হক স্বর্ণা চারিত্রিক সনদ পেতে কাউন্সিলর অফিসে ঘুরছেন দিনের পর দিন। গত ৫ আগস্ট থেকে এই অফিস বন্ধ। কাউন্সিলর আত্মগোপনে থাকায় সেখানে কোনো সেবাও মিলছে না।
ঢাকা উত্তর সিটির ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অফিসেও একই চিত্র। দীর্ঘদিন পরিষেবা না থাকার কারণে সেখানে ধুলো জমে গেছে। দক্ষিণ সিটির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অফিসও কার্যত বন্ধ। কিছু এলাকায় নাগরিক সেবা দিতে আঞ্চলিক অফিস নির্ভর হয়ে পড়েছে সিটি করপোরেশন।
নাগরিক সেবা বিলম্বিত হওয়ার কারণ হিসেবে ডিএনসিসি’র অঞ্চল-২-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান বলেন, “জনপ্রতিনিধিরা এলাকার মানুষের পরিচিত ছিলেন, তাই তাৎক্ষণিক সেবা দিতে পারতেন। কিন্তু আমলারা সবাইকে চেনেন না, তাই পরিচয় নিশ্চিত করতে বেশি সময় লাগছে।”
ঢাকার ফ্লাইওভার, অলিগলি ও প্রধান সড়কে জমে থাকা আবর্জনা সরানোর কাজেও উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দিনে মাত্র একবার কাজ করছেন। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে তাদের কাজের গতি কমে গেছে।
একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী জানান, “ভ্যানের সংকট থাকায় যতটুকু কাজ সম্ভব, ততটুকুই করছি।”
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশন নতুন দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করলেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাব স্পষ্ট। ফগিং ও লার্ভিসাইডিং কার্যক্রম অনিয়মিত। এডিস মশার বিস্তার রোধে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।
সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের দাবি, জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে তারা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, “ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অফিসে সচিবদের বসানো হচ্ছে। সচিব না থাকলে, অন্য কোনো কর্মকর্তাকে বসিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।”
ডিএনসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, “জনপ্রতিনিধির অভাবে সেবায় কিছুটা ত্রুটি থাকছে।”
প্রবীণ এলাকাবাসী ও সেবা গ্রহীতারা বলছেন, নাগরিক সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তি চরমে। অব্যবস্থাপনার কারণে প্রয়োজনীয় সেবা পেতে তাদের দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
।