গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী পদক্ষেপ ও নাহিদ ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ইতিহাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই আন্দোলনের সময় গণমাধ্যমকে নানা ধরনের সরকারি নিয়ন্ত্রণের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে সেই সময়ের অন্যতম ছাত্রনেতা এবং বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী বার্তা দিয়েছেন।
নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন গণমাধ্যম গঠনের জন্য একটি নতুন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশন এমন আইন প্রণয়ন করবে, যা ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে গণমাধ্যমের ওপর খবরদারি করার সুযোগ দেবে না। তিনি বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে অন্তরায় যে আইনগুলো রয়েছে, সেগুলো আমরা পুনরায় পর্যালোচনা করছি। পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়গুলোও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশে একটি পরিবেশ তৈরি করা যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে গণমাধ্যম চর্চা করতে পারে।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া সহিংসতার কারণে তৎকালীন সরকার এবং আওয়ামী লীগ বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে আসে। বিশেষত, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা এবং নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগ তাদের নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নৈতিক দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। তারা রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে এবং আইনত তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।”
সরকারের এই কঠোর অবস্থানের ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন পরিবর্তনের আভাস দেখা যাচ্ছে।
বর্তমান সরকার সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। নাহিদ ইসলাম স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, নির্বাচন দ্রুত আয়োজনের জন্য বিএনপির চাপ থাকা সত্ত্বেও, সরকার সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরেই নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা জনগণের আকাঙ্ক্ষার কাছে দায়বদ্ধ। তাই কোনো রাজনৈতিক দলের দাবি নয়, বরং সংস্কার প্রক্রিয়ার সঠিক বাস্তবায়ন আমাদের অগ্রাধিকার।”
গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নানামুখী আন্দোলনের চাপ সামলাতে হচ্ছে। নাহিদ ইসলাম মনে করেন, কিছু দাবি ন্যায্য হলেও সবগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “অনেক দাবির আড়ালে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রও থাকতে পারে। তাই সব দাবি বাস্তবসম্মতভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।”
নাহিদ ইসলামের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, সরকার একটি স্বাধীন এবং জবাবদিহিমূলক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত আইন বাস্তবায়িত হলে এটি শুধু স্বাধীনতাকে রক্ষা করবে না, বরং ভবিষ্যতে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকেও শক্তিশালী করবে।