অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সামনেই হামলার শিকার
নাটোরের বড়াইগ্রামের একটি মর্মান্তিক ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। উজ্জ্বল কুমার মন্ডল নামে একজন আওয়ামী লীগ কর্মীকে বেধড়ক পেটানোর একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকাল থেকে ২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
ঘটনাটি স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক এবং ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। তারা জানান, উজ্জ্বল কুমার মন্ডল আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন। তবে গত বুধবার তিনি অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে চিকিৎসা করানোর জন্য নিজের গ্রামের বাড়ি কালিকাপুরে আসেন। তার আসার খবর পেয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে তার বাড়িতে হামলা চালায় এবং পরিবারের সামনেই তাকে নির্মমভাবে মারধর করে।
উপস্থিত ভিডিওতে দেখা যায়, সাত-আটজনের একটি দল লাঠিসোঁটা নিয়ে উজ্জ্বলকে বেধড়ক পেটাচ্ছে। এ সময় তার বৃদ্ধ মা-বাবা এবং অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাদেরকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, আহত উজ্জ্বলের স্ত্রী হামলাকারীদের পা ধরে মারধর বন্ধ করার আকুতি জানাচ্ছেন। কিন্তু তার অনুরোধ সত্ত্বেও হামলাকারীরা থেমে যায়নি। এক পর্যায়ে উজ্জ্বল অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে বসিয়ে পানি খাওয়ানো হয়।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা উজ্জ্বল মন্ডলকে পুলিশে হস্তান্তর করে। এরপর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার সকালে উজ্জ্বলকে আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত পরে তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এই বর্বরোচিত ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা এ ধরনের হামলার নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “রাজনৈতিক মতভেদ থাকতেই পারে, কিন্তু একজন মানুষের ওপর এমন নির্যাতন অমানবিক। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উজ্জ্বল মন্ডল আত্মগোপনে চলে যান। ধারণা করা হচ্ছে, তার রাজনৈতিক পরিচয় এবং দলের প্রতি আনুগত্যই তাকে এ নির্যাতনের লক্ষ্য বানিয়েছে।
—
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। মানুষ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছে।
ভিডিওটি দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
—
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারের তরফ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।