মুগ্ধকে নিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদন:
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ফ্রিল্যান্সার মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধকে নিয়ে একটি হৃদয়বিদারক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ২৫ বছর বয়সী মুগ্ধ কাঁদানে গ্যাসের জ্বালায় চোখ মুছতে মুছতে বিক্ষোভকারীদের হাতে পানির বোতল তুলে দিচ্ছিলেন। কয়েক মিনিট পরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর এই শিক্ষার্থী।
১৮ জুলাই দুপুরে ঢাকার উত্তপ্ত পরিবেশে আন্দোলনে অংশ নেওয়া অবস্থায় মুগ্ধের কপালে একটি বুলেট বিদ্ধ হয়। সহপাঠীরা দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তিনি বাঁচতে পারেননি। তার যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান সিএনএনকে জানান, “আমি শুধু তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, আর কেঁদেছিলাম।”
মুগ্ধের মৃত্যুর ঠিক আগে বিক্ষোভকারীদের হাতে পানি দেওয়ার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা মানুষের মনে গভীর দাগ কাটে। নিহতদের জন্য ন্যায়বিচার চাইতে আরও অনেক মানুষ তখন রাস্তায় নামতে প্রেরণা পান।
মুগ্ধ ও তার যমজ ভাই স্নিগ্ধ জন্ম থেকেই একসঙ্গে বড় হয়েছেন। তারা সব কিছু একসঙ্গে করতেন—খাওয়া, ঘুম, পড়াশোনা থেকে শুরু করে একে অপরের সঙ্গে সব গোপনীয়তাও ভাগাভাগি করতেন। স্নিগ্ধ বলেন, “সে শুধু আমার ভাই ছিল না, আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল। আমরা একসঙ্গে সবকিছু করতাম।”
মুগ্ধ গণিতে স্নাতক সম্পন্ন করে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শ্রেণিতে পড়ছিলেন। তিনি ও তার ভাই ইউরোপ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখতেন এবং সে উদ্দেশ্যে টাকা জমাচ্ছিলেন। তারা অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম ফাইভআরে সোশ্যাল মিডিয়া বিপণনের কাজ করতেন।
মুগ্ধের মৃত্যুর পর তার বড় ভাই দীপ্ত ও যমজ ভাই স্নিগ্ধ এক অসহায় ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়েছেন। তারা মুগ্ধের পরিচয়পত্রটি রেখেছেন, যা তার মৃত্যুর সময় গলায় ছিল এবং তার রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। এখন তারা মুগ্ধের প্রভাবিত আন্দোলন থেকে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করছেন।
স্নিগ্ধ বলেন, “তার কারণে মানুষ প্রতিবাদ করার শক্তি পেয়েছে। সে সবসময় বলত, ‘আমি আমার মা–বাবাকে একদিন গর্বিত করব।'”