ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট ও সড়ক নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনা করে, হাইকোর্ট একটি যুগান্তকারী নির্দেশনা দিয়েছেন। বিচারপতি ফাতেমা নজীব এবং বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ মঙ্গলবার আদেশ জারি করে তিন দিনের মধ্যে ঢাকা শহরের অলিগলি ও মূল সড়ক থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা সম্পূর্ণভাবে অপসারণের নির্দেশ দেন।
বর্তমানে ঢাকা মহানগরীর প্রায় ১২ লাখ রিকশার একটি বড় অংশ ব্যাটারিচালিত। অধিকাংশ প্যাডেলচালিত রিকশায় অবৈধভাবে ব্যাটারি সংযুক্ত করে যান্ত্রিক রূপ দেওয়া হয়েছে। এসব রিকশা সাধারণত খিলগাঁও, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, ডেমরা, মিরপুরসহ বিভিন্ন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় দেখা যায়। যদিও এদের গতি বেশি, নিরাপত্তার অভাব এবং ফিটনেসহীন অবস্থার কারণে এগুলো সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশা বা অনুরূপ থ্রি-হুইলারের কার্যক্রম আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। বিআরটিএ’র তথ্য অনুযায়ী, ব্যাটারিচালিত এই যানবাহনগুলো ফিটনেস পরীক্ষার আওতায় পড়ে না। এগুলোর অধিকাংশই নিম্নমানের ব্যাটারি ও মোটর ব্যবহার করে তৈরি, যা সড়কে চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তদুপরি, ব্যাটারি রিকশাগুলো পরিবেশের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এ ধরনের রিকশার কারণে ঢাকার অলিগলি থেকে শুরু করে মূল সড়ক পর্যন্ত যানজটের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে গেছে। অলিগলির জন্য উপযোগী হলেও সুযোগ পেলেই মূল সড়কে উঠে আসে এসব রিকশা। এতে বাস, ট্রাক, ও অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে।
সড়ক দুর্ঘটনার ক্রমবর্ধমান হার এবং নগরীর শৃঙ্খলা ফেরাতে হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আদেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিআরটিএ ও ডিএমপিকে। আগামী তিন দিনের মধ্যে রাজধানীর অলিগলি এবং মূল সড়ক থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্টের এ নির্দেশনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একদিকে অনেকে মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত সড়ক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। অন্যদিকে, এর ফলে রিকশাচালকদের জীবিকা সংকটে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া রাস্তার শৃঙ্খলা রক্ষা ও পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবহারে উৎসাহিত করার জন্য সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।
সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ও নগরবাসীর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের এই পদক্ষেপ একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ। তবে সিদ্ধান্তটি সঠিকভাবে কার্যকর করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। একই সঙ্গে রিকশাচালকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে এই নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব লাঘব করা জরুরি।