কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর এলাকা থেকে শনিবার (১৬ নভেম্বর) দেশের অন্যতম শীর্ষ চাল ব্যবসায়ী ও রশিদ এগ্রো ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের মালিক আব্দুর রশিদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব জানান, তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, ঋণখেলাপিসহ অন্তত ৬৮টি মামলা রয়েছে।
ওসি শিহাব জানান, রাজশাহীর পুঠিয়া এলাকার ইনাম ফিড মিলের মালিক আতিকুর রহমান ২০২২ সালে রশিদ অয়েল মিল থেকে ফিড মিলের কাঁচামাল কেনার জন্য চেকের মাধ্যমে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেন। তবে দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও আব্দুর রশিদ কাঁচামাল সরবরাহ করেননি বা টাকাও ফেরত দেননি।
এ ঘটনায় আতিকুর রহমান ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট রাজশাহী চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আব্দুর রশিদ ও তার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসানকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার শুনানিতে আদালত রশিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই পরোয়ানার ভিত্তিতেই শনিবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আব্দুর রশিদের প্রতিষ্ঠিত রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড দেশের বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে অবস্থিত। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পান।
তার নেতৃত্বেই দেশের চাল ব্যবসায়ের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। রশিদকে চাল সিন্ডিকেটের হোতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়, যিনি ইচ্ছেমতো চালের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থির করতেন।
তবে শত শত কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ ও ধান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেয়া ঋণের দায়ে তার ব্যবসা ধসে পড়ে। ঋণখেলাপি হয়ে যাওয়ায় তিনি পরিবারসহ আত্মগোপনে চলে যান।
ওসি শিহাবুর রহমান জানান, আব্দুর রশিদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আদালতে ৬৮টির বেশি মামলা রয়েছে। এদের বেশিরভাগই ঋণখেলাপি ও প্রতারণা সংশ্লিষ্ট। তিনি আরও বলেন, “শনিবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া শহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে মডেল থানা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।”
আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারের শীর্ষ মহল তাকে চাল সিন্ডিকেটের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেছে। তার সিন্ডিকেটের কারণেই বাজারে চালের দাম অস্থিতিশীল হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
কথা
গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দেশের শীর্ষ চাল ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এতদিন ধরে চলা মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এই গ্রেপ্তারের পর চাল ব্যবসায়ের বাজারে কোনো প্রভাব পড়ে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।