ফুটবল বিশ্বে সাফল্যের রঙে বছরটা রাঙাতে না পারলেও ২০২৩ সালের শেষ দিকে এসে সুখবর পেয়েছে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মালদ্বীপকে ২-১ গোলে পরাজিত করে একটি সুন্দর নোটে বছর শেষ করতে পেরেছে হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা। দুই ম্যাচের এই সিরিজটি সমতা ১-১ এ শেষ করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে জয় এনে দিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকার কিংস অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে পিছিয়ে পড়ার পর ফিরে এসে অতিরিক্ত সময়ে জয়সূচক গোলটি করেন পাপন, যা পুরো স্টেডিয়ামকে উল্লাসে মাতিয়ে তোলে।
ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচের একাদশ থেকে পরিবর্তন এনে কোচ হাভিয়ের কাবরেরা এদিন সাইয়েদ কাজেম কিরমানির পরিবর্তে মাঠে নামান মজিবর রহমান জনিকে। তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে সাজানো এই দলটি শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙিতে মাঠে নামে।
খেলার ষষ্ঠ মিনিটেই ডানপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণ শুরু করে বাংলাদেশ। জনি দ্রুতগতিতে প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেদ করে বক্সে ঢুকলেও তার পাস থেকে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশের আক্রমণভাগ। কিন্তু মাত্র ২৪ মিনিটের মাথায় তপু বর্মনের ভুল পাস থেকে সুযোগ নিয়ে মালদ্বীপের আলি ফাসির গোল করেন। এর ফলে পিছিয়ে পড়ে স্বাগতিক দল।
প্রথমার্ধ শেষ হবার ঠিক ২ মিনিট আগে স্বাগতিকরা সমতায় ফেরে। মোরসালিনের চমৎকার পাস থেকে বল পেয়ে ফাহিম দ্রুততার সঙ্গে জনিকে বাড়িয়ে দেন। জনি বল নিয়ে প্রতিপক্ষের চারজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডান পায়ে দুর্দান্ত শটে গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন জালে। মালদ্বীপের গোলরক্ষক বলটি আটকানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন।
এই গোলটি শুধু সমতা ফেরায়নি, বরং স্বাগতিকদের আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে দেয়। বিরতির আগে সমতায় ফেরার ফলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে নতুন উদ্যম লক্ষ্য করা যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই দু’দলই আক্রমণাত্মক ভঙিতে খেলতে থাকে। একদিকে মালদ্বীপের ফরোয়ার্ডরা বাংলাদেশের রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করছিল, অন্যদিকে স্বাগতিকরাও পাল্টা আক্রমণে গোলের সুযোগ খুঁজছিল।
ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের শেষ দিকে, রহমত মিয়ার ক্রসে সুযোগ তৈরি হলেও তপু বর্মন হেড দিয়ে গোল করতে ব্যর্থ হন। এ নিয়ে দর্শকদের হতাশা বাড়লেও দলের মনোবল দৃঢ় ছিল।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তখন সবাই ধরে নিয়েছিল যে, ম্যাচটি হয়তো ড্র নিয়েই শেষ হবে। কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি বদলে দেন তরুণ খেলোয়াড় পাপন।
শাহরিয়ার ইমনের ক্রস থেকে পাওয়া বলটি মাথা দিয়ে দারুণভাবে লক্ষ্যভেদ করেন পাপন। ডি-বক্সের মধ্যে তার নিখুঁত হেড প্রতিপক্ষের গোলরক্ষককে পরাস্ত করে বল জালে জড়ায়। এই গোলটি বাংলাদেশের জন্য শুধু জয় নয়, বরং সমর্থকদের জন্য এক বড় আনন্দের উপলক্ষ হয়ে ওঠে।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা বলেন, “এই জয় দলের মনোবল বাড়িয়েছে। আমাদের লক্ষ্য এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে ভালো পারফরম্যান্স করা, আর এই জয় সেই পথচলায় একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে।”
অপরদিকে, জনি এবং পাপনের পারফরম্যান্সে খুশি হয়ে কোচ তাদের প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে জনির দুর্দান্ত গোল এবং পাপনের জয়সূচক হেড দলের জয়ের মূল চাবিকাঠি ছিল।
মালদ্বীপের বিপক্ষে এই দুই ম্যাচের প্রীতি সিরিজটি ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি প্রস্তুতি পরীক্ষার মতো। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ পরাজিত হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে। সিরিজটি সমতায় শেষ হলেও বাংলাদেশের এই জয়ে ফুটবলপ্রেমীরা নতুন আশা দেখছেন।
এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের র্যাঙ্কিং উন্নত করার পাশাপাশি এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের প্রস্তুতিতে আত্মবিশ্বাস যোগ করেছে। মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচগুলো থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে আসন্ন বাছাই পর্বে আরও ভালো করার আশা করছেন হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা।
কাবরেরা বলেন, “আমাদের দলের তরুণরা দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। আমরা আগামী বছর আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। এই ধরনের প্রীতি ম্যাচগুলো আমাদের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে।”
সাল শেষের এই জয়ে বাংলাদেশ দলের জন্য নতুন বছর আরও আশাব্যঞ্জক হয়ে উঠেছে। তরুণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স, বিশেষ করে জনি ও পাপনের মতো ফুটবলাররা দলের ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করে তুলেছেন। আগামীতে আরও উন্নত পারফরম্যান্সের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে বাংলাদেশ, যা দেশের ফুটবলের জন্য একটি সুসংবাদ।
এই জয় দিয়ে হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা দেখিয়ে দিলেন, সম্ভাবনা ও পরিশ্রম একত্রিত হলে প্রতিকূলতা জয় করা সম্ভব। মালদ্বীপের বিপক্ষে এই নাটকীয় জয় শুধু ফুটবলপ্রেমীদের নয়, বরং পুরো জাতির জন্য আনন্দের এক মুহূর্ত হয়ে থাকবে।