নতুন ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং দেশটির বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে ভারতীয়-আমেরিকান কমিউনিটির একটি প্রভাবশালী অংশ। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ভারতের বংশোদ্ভূত আমেরিকান চিকিৎসক ড. ভারত বড়াই এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় শপথ গ্রহণের পর ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশ উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন ক্যাপিটলে আয়োজিত বার্ষিক দীপাবলি উদযাপনে অংশ নিয়ে ড. ভারত বড়াই বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের ব্যাপারে ট্রাম্প সাহসী অবস্থান নিয়েছেন। যদি পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটে, তবে তিনি হয়তো বাংলাদেশে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বিবেচনা করবেন।”
বড়াইয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, নতুন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন ভারতীয়-আমেরিকানরা। তাদের উদ্দেশ্য হলো, দেশটির রপ্তানিভিত্তিক শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করা, যা সরকারকে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে বাধ্য করবে।
ড. বড়াই অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মন্দির এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর হামলা বেড়েই চলছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় মার্কিন প্রশাসন যদি কোনো শক্ত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ সরকার এবং তাদের সামরিক বাহিনী মূলত দেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ করছে। তাঁর মতে, “ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।”
ড. বড়াইয়ের মতে, নতুন ট্রাম্প প্রশাসন এবং কংগ্রেসের সঙ্গে ভারতীয়-আমেরিকানরা কাজ করে যাচ্ছেন, যাতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তিনি বলেন, “আমরা কংগ্রেসের কাছেও আবেদন জানাবো, যাতে তারা বাংলাদেশ সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করে। আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের সরকারকে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় বাধ্য করা।”
বড়াই আরও বলেন, “বাংলাদেশের রপ্তানিভিত্তিক পোশাকশিল্প দেশটির মোট ব্যবসার প্রায় ৮০ শতাংশ আয় জোগায়। যদি এই খাত বন্ধ হয়ে যায়, তবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়বে। আমাদের বিশ্বাস, এর ফলে সরকার সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধ করতে বাধ্য হবে।”
ড. বড়াই ভারত সরকারকেও আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা বাংলাদেশকে সতর্ক করে এবং প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দিকে অগ্রসর হয়। তিনি বলেন, “যদি বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ না করে, তবে ভারতও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে।”
ভারতীয়-আমেরিকানরা মনে করছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধে চাপ সৃষ্টি করতে হলে, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়েরই কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত। এই উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের ওপর দ্বিমুখী চাপ তৈরি হতে পারে, যা দেশটির শাসনব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে।
সম্প্রতি মার্কিন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ট্রাম্প একটি বিবৃতিতে বলেছেন, “বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। আমার প্রশাসনের অধীনে এ ধরনের ঘটনা কখনো ঘটত না।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “বাইডেন প্রশাসন বিশ্বজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা হিন্দু আমেরিকানদের রক্ষা করব এবং চরমপন্থী বামপন্থী এজেন্ডার বিরুদ্ধে লড়াই করব। বাংলাদেশে সহিংসতা বন্ধ করতে আমরা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেব।”
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত রপ্তানিভিত্তিক হওয়ায়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সরাসরি দেশের জনগণের জীবনে পড়বে। বিশেষ করে, পোশাক শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে লক্ষাধিক শ্রমিকের চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ড. বড়াইয়ের মতে, “যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়, তবে তা বাংলাদেশের সরকারকে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধে বাধ্য করবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়, বিশেষ করে ড. ভারত বড়াইয়ের নেতৃত্বে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার জন্য যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই প্রচেষ্টা যদি সফল হয়, তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
নতুন ট্রাম্প প্রশাসন কতটা কঠোর পদক্ষেপ নেবে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক কতটা প্রভাবিত হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে সাম্প্রতিককালে যেভাবে ভারতীয়-আমেরিকানরা সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাতে বাংলাদেশের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ার আশঙ্কা থাকছেই।