ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশে নেপালের জলবিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
ঢাকা, ১৫ নভেম্বর:
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) নেপাল থেকে ভারতের গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সূচিত এই উদ্যোগকে তিন দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ সহযোগিতার নতুন যুগের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের বিদ্যুৎ, আবাসন ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী মনোহর লাল, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. ফাওজুল কবির খান এবং নেপালের জ্বালানি, জলসম্পদ ও সেচমন্ত্রী দীপক খাড়কা।
ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি) প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই উদ্যোগ নেপাল, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুৎ সহযোগিতার একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
২০২৩ সালের মে মাসে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল (প্রচণ্ড)-এর ভারত সফরের সময় এই বিদ্যুৎ রপ্তানির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সফরটি আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সংযোগ জোরদার করার অঙ্গীকারে সমৃদ্ধ ছিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বাংলাদেশে সরবরাহের পরিকল্পনা করা হয়।
২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর কাঠমান্ডুতে এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে একটি ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বিক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির তিনটি অংশীদার প্রতিষ্ঠান হলো:
1. নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথোরিটি (এনইএ)
2. বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)
3. ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যবসা নিগম (এনটিপিসি)
এই চুক্তি তিন দেশের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।
নেপাল তাদের উদ্বৃত্ত জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করতে পারায় নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে বিদ্যুৎ পরিবহন অঞ্চলে সুষম বণ্টনের একটি কার্যকর উদাহরণ হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ার জ্বালানি বাজারের উন্নয়ন এবং আর্থিক সংযোগ শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের কার্যক্রম শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সহযোগিতার বিষয় নয়, বরং এটি তিন দেশের মধ্যে আন্তঃসংযোগ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধির প্রতীক।
বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রমের সুবিধা
এই প্রকল্প থেকে তিনটি দেশই সরাসরি উপকৃত হবে:
1. বাংলাদেশ: ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
2. নেপাল: জলবিদ্যুৎ সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারবে।
3. ভারত: আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সংযোগের কেন্দ্রে পরিণত হবে।
নেপাল থেকে সরবরাহকৃত ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম ৯ টাকার কম। এই কম খরচে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করবে।
নেপাল, ভারত এবং বাংলাদেশের এই ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ চুক্তি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার একটি মডেল হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ আরও বড় পরিসরে জ্বালানি সহযোগিতার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। ভবিষ্যতে অন্যান্য প্রতিবেশী দেশও এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে পারে।
এই উদ্যোগের সাফল্য আঞ্চলিক জ্বালানি বাজারকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি তিন দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
—