বৃত্তি পরীক্ষার ঐতিহ্য ও বর্তমান পরিস্থিতি
বাংলাদেশে একসময় পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি পরীক্ষা ছিল একটি বড় শিক্ষা কার্যক্রম। এটি শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হতো। তবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা চালু হওয়ার পর থেকে এ দুটি শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে, ২০২১ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা বাতিল হওয়ার পর শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সরকার পুনরায় বৃত্তি পরীক্ষা চালুর পরিকল্পনা করছে। ২০১২ সালে প্রবর্তিত সৃজনশীল পদ্ধতিকে বহাল রেখে, পুরোনো পদ্ধতিতে বৃত্তি পরীক্ষার বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি পরীক্ষা পুনরায় চালু করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার (পিইসি) আগে পৃথক বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ এ বিষয়ে বলেন, “এটি নতুন কিছু নয়। পুরোনো পদ্ধতিতে আবার ফেরা হচ্ছে। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। যারা আগ্রহী, কেবল তাদেরই বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।”
১. স্বেচ্ছামূলক অংশগ্রহণ: আগের মতোই শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক হবে না। এটি পুরোপুরি ঐচ্ছিক।
২. মেধার মূল্যায়ন: শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই করার মাধ্যমে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করার সুযোগ দেওয়া হবে।
৩. আর্থিক সহায়তা: বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগত সহায়তা হিসেবে আর্থিক প্রণোদনা পাবে।
২০১২ সালে প্রবর্তিত সৃজনশীল পদ্ধতি বর্তমান শিক্ষাক্রমে বহাল রাখা হয়েছে। বৃত্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এই পদ্ধতির আলোকে তৈরি করা হবে। এতে শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণী ও সমস্যার সমাধানমূলক দক্ষতা যাচাই করা সম্ভব হবে।
সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা মুখস্থবিদ্যা পরিহার করে বাস্তবজ্ঞান ও চিন্তাভাবনার ওপর গুরুত্ব দিতে পারে।
বৃত্তি পরীক্ষা পুনরায় চালুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করছেন।
- পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষার আগে পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।
- শিক্ষার্থীদের আগ্রহের ভিত্তিতে স্বেচ্ছামূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
- প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশিকা দেওয়া হবে।
পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মেধার উন্নয়ন এবং শিক্ষাগত সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ উদ্যোগ শিক্ষাক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য এই পরিবর্তন হবে একটি নতুন সুযোগ, যা তাদের সৃজনশীলতা ও প্রতিভাকে বিকশিত করতে সহায়তা করবে। অভিভাবকদের এই উদ্যোগ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সন্তানদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা অত্যন্ত জরুরি।