বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে। তবে এই সেনা মোতায়েন কতদিন চলবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সরকারের। সেনাবাহিনী এই বিষয়ে শুধু নির্দেশনা পালন করবে বলে জানিয়েছেন সেনা সদরের কর্নেল স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান।
১৩ নভেম্বর (বুধবার) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, “সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্তে এবং সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা দেওয়ার জন্য। কতদিন মাঠে থাকব, তা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে যে কোনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
সেনাবাহিনী মাঠে থাকাকালীন মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ উঠেছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, “আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। আমাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছ থেকে এ বিষয়ে কড়া নির্দেশনা রয়েছে। যে কোনও পরিস্থিতিতে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা যেন না ঘটে, আমরা তা নিশ্চিত করতে কাজ করছি।” তিনি আরও যোগ করেন, “যদি এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসে, তা হলে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এমন বক্তব্য দেওয়ার উদ্দেশ্য জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করা এবং সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল ভূমিকা নিশ্চিত করা। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী আইনের শাসন বজায় রাখার জন্য বিশেষভাবে তৎপর রয়েছে।
জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চাকরিচ্যুত ও পলাতক মেজর জিয়াউল হক জিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, “এই মুহূর্তে সেনাবাহিনীর কাছে এ বিষয়ে কোনও তথ্য নেই। তবে তথ্য পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করেন যে, সেনাবাহিনী জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে তৎপর এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তদন্তে গুরুত্ব দিচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনায় কোনও ভূমিকা পালন করবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, “আমরা দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি। তবে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি পুলিশের দায়িত্ব। আমরা সহায়তা করতে প্রস্তুত আছি, তবে এটি সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে করতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার স্থায়ী সমাধান দরকার।”
সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, “এ মুহূর্তে সেনাবাহিনীর কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। তবে যদি কখনও এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়, তা হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এর মাধ্যমে তিনি উল্লেখ করেন যে, সেনাবাহিনী মানুষের জীবনের মূল্য এবং ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
লিখিত বক্তব্যে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান জানান, “দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় নিয়োজিত রয়েছে।” সেনাবাহিনী এখন যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা হলো:
- জানমাল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষা: সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা: পুলিশ বাহিনীকে পুনরায় কার্যক্ষম হতে সহায়তা করছে।
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা: স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণের সহযোগিতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করছে।
- বিদেশি দূতাবাস এবং কমিউনিটির নিরাপত্তা: বিদেশি দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
- শিল্পাঞ্চল ও কারখানার নিরাপত্তা: শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা এবং কারখানাগুলোর কার্যক্রম সচল রাখতে সহায়তা করছে।
- অরাজকতা ও ভাঙচুর প্রতিরোধ: বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় অরাজকতা ও ভাঙচুর প্রতিরোধ করা হচ্ছে।
পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান জানান, “এসএসএফের ভারী অস্ত্র খোয়া যায়নি, তবে কিছু পিস্তল খোয়া গেছে এবং সেগুলো উদ্ধারে কাজ চলছে। এছাড়া, পুলিশের বেশ কিছু খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, এবং বাকিগুলো উদ্ধারে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।”
সরকারের নির্দেশনায় সেনাবাহিনী মাঠে নামানো হয়েছে এবং তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে নিরলস কাজ করছে। তবে সেনাবাহিনী কতদিন মাঠে থাকবে সে বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে এবং দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করে যাবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বিদেশি সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা বিধানে সেনাবাহিনী বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষের মতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো হয়েছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে আরও উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে।
সেনাবাহিনীর এই কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে বলে সকলেই আশাবাদী।