বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল চেয়ে আদানি বিদ্যুৎ চুক্তির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আইনি লড়াই
সম্প্রতি ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশের স্বার্থবিরোধী ও একতরফা হিসেবে বিবেচিত এই চুক্তির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. আবদুল কাইয়ুম এই রিট পিটিশন দায়ের করেন। আজ ১৩ নভেম্বর, বুধবার এই রিট আবেদন হাইকোর্টে উত্থাপন করা হয়, যেখানে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে এর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
২০১৭ সালে বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমোদনে তড়িঘড়ি করে আদানি গ্রুপের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সম্পাদিত হয়। ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত আদানির ১,৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য এই চুক্তি করা হয়। তবে, চুক্তির শর্তাবলীর বিভিন্ন দিক নিয়ে দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশবাদী সংগঠন প্রশ্ন তুলেছেন। মূলত, চুক্তিটির শর্তগুলোকে অযৌক্তিক এবং দেশের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
গত ৬ নভেম্বর, সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী সরকারের কাছে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। এতে আদানি গ্রুপের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিটি পুনর্বিবেচনা বা বাতিলের জন্য আহ্বান জানানো হয়। নোটিশে বলা হয়, আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা এই চুক্তি একতরফা ও অন্যায্য, যা বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপন্থী। সেইসাথে, চুক্তির বিভিন্ন দিক পর্যালোচনার জন্য জ্বালানি এবং আইনি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করার অনুরোধ জানানো হয়।
নোটিশের জবাব দিতে তিন দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করে বলা হয় যে, এই সময়সীমার মধ্যে সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিলে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হবে। তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট আইনজীবী রিট আবেদনটি দায়ের করেন।
এই চুক্তির বিরুদ্ধে রিট আবেদনে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে যে, দেশের অর্থনীতি ও জ্বালানি খাতের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এ ধরনের চুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ খাতে দেশের ওপর ঋণ চাপ সৃষ্টি হবে। একইসাথে এই চুক্তি অনুসারে বিদ্যুতের দাম অনেক বেশি হতে পারে, যা দেশের সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলবে। ফলে, সরকারের উচিত চুক্তিটি পুনর্বিবেচনা করা এবং দেশের স্বার্থের পরিপন্থী শর্তগুলো নিয়ে আলোচনা করা।
জ্বালানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, আদানি গ্রুপের এই চুক্তি মূলত দেশের ওপর একতরফা শর্ত আরোপ করে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই চুক্তির ফলে দেশকে অধিক মূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে হতে পারে। এছাড়া, চুক্তিতে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া শর্তগুলো পর্যালোচনা না করলে ভবিষ্যতে এটি দেশের আর্থিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে অবিলম্বে এ ধরনের চুক্তি বাতিল করা উচিত।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উচ্চ খরচে বিদ্যুৎ আমদানি। এছাড়া, বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে, যা দেশের বিদ্যুৎ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের জন্য অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়ানো উচিত এবং এর ওপর ভিত্তি করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বর্তমানে এই চুক্তি বাতিলের জন্য হাইকোর্টে যে রিট আবেদন করা হয়েছে, তার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে এই রিট আবেদনটি দেশের জ্বালানি খাতের অগ্রগতিতে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে। যদি আদালত এই চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত দেয়, তবে দেশের জন্য এটি একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।