দেশে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গেলো কয়েক বছরে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুহার কমলেও বর্তমানে এ রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, সময়মতো সঠিকভাবে শনাক্ত ও চিকিৎসা দিলে অধিকাংশ শিশুই সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই রোগ প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত ব্যবস্থা এবং গবেষণা অত্যন্ত জরুরি।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের এক বছরের শিশু সাদি ইসলাম নিউমোনিয়ার জটিলতায় ভুগছে। মাত্র এক বছরে দু’বার তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হয়েছে। হাসপাতালের অন্য বেডে রয়েছে আরেক দু’মাসের শিশু সাদিক ইসলাম, যার বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে হাসপাতালে। তিন বছরের আয়ানও দীর্ঘ চিকিৎসার ধকল সামলাচ্ছে। এই শিশুরা হাসপাতালের চার দেয়ালের মাঝে আটকে আছে, যেখানে তাদের বয়সী অন্যান্য শিশু বাড়ির আঙিনায় খেলার সুযোগ পায়।
দেশে শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে নিউমোনিয়া অন্যতম। প্রতিবছর প্রায় ২৪ হাজার শিশু নিউমোনিয়ার জটিলতায় মারা যায়। প্রতিদিন নতুন রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলায় বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ বাড়ছে। শুধুমাত্র শিশু নয়, এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রবীণরাও। যদিও চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকেই সুস্থ হয়ে ওঠেন, তবুও এই রোগের স্থায়ী সমাধান এখনও সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক পালমোনোলজি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার সরকার বলেন, “৯০-এর দশকে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ শিশু মারা যেতো। যদিও এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা আমরা পূরণ করতে পেরেছি, তবে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার তিন শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জন করা যায়নি।”
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, “যারা প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন, তাদের অধিকাংশই সুস্থ হন। তাদের শরীরে বড় কোনো জটিলতা তৈরি হয় না।” বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদান করা গেলে মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মহিমা বেনজীর হক বলেন, “নিউমোনিয়া প্রতিরোধে প্রয়োজন যথাযথ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ। একজন চিকিৎসকের অধীনে ১০ হাজার রোগী থাকলে তার পক্ষে পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউমোনিয়ার প্রকোপ কমাতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং সারা দেশের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে গবেষণার প্রয়োজন।
নিউমোনিয়ার এই সমস্যার সমাধানে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর সক্রিয় সহযোগিতা এবং গবেষণা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।