নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে রাস্তার গ্যাস মেইন লাইনের লিকেজ থেকে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাত শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন, যাদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার (১১ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরের সোনাপুর লাভলী সিনেমা হলের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
এই দুর্ঘটনায় দগ্ধদের মধ্যে রয়েছেন জয় (২০), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), মো. সুলতান (২৪), রাজু, মিজান (৩৮), রিপন (৩৮), এবং মো. শাহজালাল। জানা গেছে, এদের মধ্যে দুজন শঙ্কামুক্ত হলেও বাকি পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে ঢাকার ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে, যেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাদের চিকিৎসা করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার রাতে শ্রমিকরা কাঁচপুরের সোনাপুর লাভলী সিনেমা হলের সামনে রাস্তার কল বসানোর কাজ করছিলেন। সেই সময় ঝালাইয়ের কাজ করতে গিয়ে পাশে থাকা গ্যাস মেইন লাইনে লিকেজ থেকে হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণের ফলে চারিদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং স্থানীয় লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে।
স্থানীয়দের মতে, গ্যাস লাইনের লিকেজটি আগেই ছিল এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস লাইনে যে কোন ধরনের লিকেজ থাকলে তা দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন। অনেক সময় রাস্তার কাজের সময় এসব লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকে, যা প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে কর্তৃপক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোন নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্যাস লাইনে এমন লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ এড়াতে আরো সজাগ ও সাবধান হওয়া জরুরি। সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানিয়েছেন যে, ঘটনার পর পরই ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও অন্যান্য উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
স্থানীয় শ্রমিকদের অভিযোগ, রাস্তা খনন ও সংস্কারকাজ চলাকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। তারা দাবি করেন, যে কোন সময় গ্যাস লাইনে লিকেজ হলে তা দ্রুত মেরামত না করা হলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে। শ্রমিকদের মতে, গ্যাস কোম্পানিগুলোর উচিত তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করা।
ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, দগ্ধ শ্রমিকদের মধ্যে কয়েকজনের শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে গেছে, যা অত্যন্ত গুরুতর। পাঁচজনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাদের সঠিক চিকিৎসার জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস মেইন লাইনের লিকেজ কিংবা যেকোনো ধরনের টেকনিক্যাল ত্রুটি দ্রুত শনাক্ত এবং মেরামত করা প্রয়োজন। এমন ঘটনা থেকে জনসাধারণকে নিরাপদ রাখতে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে গ্যাস কোম্পানিগুলোর জরুরি তৎপরতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।