ঢাকায় উন্নতমানের বাস সেবা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
ঢাকা শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরেই যাত্রীবান্ধব, সুশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। বাসগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য যে উদ্যোগগুলো নেয়া হয়েছিল, তার বেশিরভাগই কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। গত কয়েক বছরে ঢাকার গণপরিবহনকে উন্নত ও শৃঙ্খল করার বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ঢাকা নগর পরিবহনের বাস চালুর পরিকল্পনা। ২০২১ সালে ঢাকার ঘাটারচর থেকে কাচপুর পর্যন্ত বাস চালু করলেও প্রকল্পটি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।
ঢাকা নগর পরিবহনের বাস প্রকল্পের মাধ্যমে সব রুটে সুশৃঙ্খল বাস সেবা চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে বিগত সরকারের উদাসীনতা, এবং বাস মালিক সমিতির অসহযোগিতায় সেই উদ্যোগটি কার্যকর হয়নি। এ সম্পর্কে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক বলেন, “এই জায়গাগুলোয় রাজনৈতিক দৃঢ় প্রত্যয় লাগবে যেটা মেয়ররা করতে পারতেন, কিন্তু তারা সেদিকে যাননি।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে চার শতাংশ সুদে চার হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট চালু করা হলেও প্রকল্পটি তেমন কোনো সফলতা পায়নি।
সরকার পরিবর্তনের পর ঢাকায় বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পকে বাস্তবসম্মত করে বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। ধ্রুব আলম, বাস রুট রেশনালাইজেশনের প্রকল্প পরিচালক, জানান, “আমরা ধাপে ধাপে কাজ করছিলাম। তবে এখন আমরা ৪২টি রুটেই আবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি।” তিনি উল্লেখ করেন, প্রায় সহস্রাধিক বাস আবেদন করেছে এবং বাস মালিকদের কাছ থেকেও যথেষ্ট সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ পরিকল্পিত রুটে বাস চালানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকায় ৩৪টি এবং শহরতলিতে ৮টি, মোট ৪২টি রুটে বাস চলবে। এখানে প্রতিটি রুটে শুধু একটি কোম্পানির বাস পরিচালনার সুযোগ থাকবে। বাসগুলোতে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম স্থাপন করা হবে, যাতে যাত্রীদের নির্দিষ্ট স্টপেজে উঠা-নামার নিয়ম নিশ্চিত করা যায়। ধ্রুব আলম বলেন, “যেখানে সেখানে কেউ উঠা-নামা করতে পারবেন না।” এছাড়া যাত্রীদের ডিজিটালি টিকিট কাটার পদ্ধতি চালু করা হবে এবং একটি পস মেশিনের মাধ্যমে কন্ডাকটরকে টিকিট প্রদর্শন করেই যাত্রীগণ বাসে উঠবেন ও নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে নামবেন।
নতুন এই উদ্যোগের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে শুধু পরিকল্পনা নয়, প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার যথাযথ তদারকি। ড. এম শামসুল হক এই উদ্যোগে সঠিক তদারকির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, “সঠিক তত্বাবধান না হলে একচেটিয়া সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে পারে এই উদ্যোগে।” প্রকল্পটি সফল করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি একটি নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
যাত্রীদের সুবিধার্থে র্যাপিড পাস ব্যবস্থারও পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামী জুন থেকে মেট্রোরেলের মতো এই র্যাপিড পাস দিয়ে বাসেও যাতায়াত করা যাবে। পর্যায়ক্রমে বাসগুলোতে ক্যামেরা স্থাপন করা হবে, যা সুরক্ষার জন্য কার্যকর হতে পারে।
ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে এই নতুন পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন সরকারে অধীনে এই প্রকল্পের কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকার বাস সেবা আরও উন্নত ও যাত্রীবান্ধব হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।