মূল্যস্ফীতির দৌরাত্ম্য ও রিজার্ভ ঘাটতি সামলাতে সরকারের বহুমুখী উদ্যোগ
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে বহুমুখী সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, তা নিয়ে দেশে-বিদেশে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। অতীতে বিরূপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়া দেশটি আজ নতুন উদ্যোমে এগিয়ে যাচ্ছে, তবে কতটা টেকসইভাবে পরিবর্তন আসছে, সে প্রশ্নে বিশ্লেষকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। সাম্প্রতিক তিন মাসের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু করে সরকারী পর্যায়ে গ্রহণকৃত নানা উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গেলো বছরের শেষদিকে মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ঘাটতি এবং বর্ধিত বৈদেশিক ঋণ থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট বাংলাদেশকে এক ভয়াবহ অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছিল। মূল্যস্ফীতি সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলতে শুরু করে, যার প্রভাব সরাসরি দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা পূরণে বাধা সৃষ্টি করে। একইসঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে পণ্য আমদানি কঠিন হয়ে পড়ে, যার ফলে পণ্যের ঘাটতি এবং মূল্যবৃদ্ধি এক ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সেই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং অর্থনীতির এই জটিল সংকট থেকে মুক্তির জন্য সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য ছিলো অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা করে দেশকে স্থিতিশীল করা। মূল্যস্ফীতি কমানো, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বৃদ্ধি, রাজস্ব ঘাটতি পূরণ, এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমকে পুনরুজ্জীবিত করাই ছিল সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
ড. ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করে এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি ‘শ্বেতপত্র’ তৈরি করে। সেখানে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে এবং পণ্য বাজারে ভারসাম্য বজায় রাখতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়।
গত তিন মাসে সরকারের অন্যতম বড় সফলতা হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে পুনরুদ্ধার করা। বর্তমানে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছেছে, যা এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতিকে কিছুটা স্বস্তি এনে দিচ্ছে। পাশাপাশি রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে অতীতের তুলনায় অক্টোবরে ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, যা দেশের অর্থনীতিকে বিশেষভাবে সাহায্য করছে।