বিএনপির প্রগতিশীল অবস্থান ও রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে মির্জা ফখরুলের মন্তব্য
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও আদর্শগত পার্থক্য নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক এবং আন্দোলনের লক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মির্জা ফখরুল স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, দুই দলের চিন্তা ও উদ্দেশ্য আলাদা। বিএনপি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যুগপৎ আন্দোলনে থাকলেও আদর্শগত দিক থেকে জামায়াতের সঙ্গে তাদের পার্থক্য রয়েছে।
মির্জা ফখরুলের মতে, বিএনপি একটি প্রগতিশীল দল, যা একটি লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি হিসেবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও স্বাধীনতার চেতনায় অঙ্গীকারবদ্ধ। বিএনপিকে মৌলবাদী বলে অভিযুক্ত করার প্রচারণাকে তিনি ভুল ন্যারেটিভ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে বিএনপি সবসময়ই প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে চায়।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের অবস্থান পরিস্কার করেছে। বিএনপি মহাসচিব জানান যে, অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করার বিষয়ে তাদের সাথে জামায়াতের কোনো মতপার্থক্য নেই। তবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকারের জন্য যুক্তিসঙ্গত সময় দেয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, জামায়াত ইসলামী সম্পূর্ণ আলাদা একটি রাজনৈতিক দল, যাদের চিন্তাভাবনা ও আদর্শ বিএনপির থেকে ভিন্ন। তিনি আরও বলেন, “আমাদের মূল উদ্দেশ্য গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং আধুনিক প্রগতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়া। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে এবং এটি আমরা সবসময়ই বুঝিয়ে আসছি।”
জামায়াতের সাথে বিএনপির অতীত সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পূর্বে জামায়াতের সাথে বিএনপির একটি নির্বাচনী জোট ছিল। তবে, সেই সময়ের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন এসেছে এবং দুই দল আলাদা পথ অনুসরণ করেছে।
বিএনপি মহাসচিব জানিয়েছেন যে, দলের ভেতরে যে কোনও অভিযোগ বা অনিয়মের বিরুদ্ধে তারা খুবই কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ৫ আগস্টের পর বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে দলের অভ্যন্তরে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে বিএনপি তাদের একমাত্র লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, প্রয়োজনে আবারও রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা হবে। দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যা প্রয়োজন, বিএনপি সেটাই করবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে যে, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও যুগপৎ আন্দোলনে তারা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একসঙ্গে কাজ করছে। তবে, বিএনপি সবসময়ই একটি প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে এবং যেকোনো স্বৈরাচারী আচরণ থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে।