২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ আইন
সুইজারল্যান্ডে আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে পাবলিক প্লেসে মুখ ঢাকা নিষিদ্ধের একটি আইন কার্যকর হতে যাচ্ছে। এই আইন কার্যকর হলে কেউ প্রকাশ্য স্থানে মুখ ঢেকে চলাচল করতে পারবেন না। আইনটি লঙ্ঘন করলে প্রায় ১ হাজার ১৫০ ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় দেড় লাখ টাকার সমপরিমাণ জরিমানা গুণতে হবে। বোরখা বা মুখ ঢাকা নিষিদ্ধের এই সিদ্ধান্তটি দেশটির নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া হয়, যা মূলত ২০২১ সালের একটি গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছিল।
সুইজারল্যান্ডে আইনটি ‘বোরখা নিষিদ্ধ আইন’ হিসেবে পরিচিত। তবে বিভিন্ন মুসলিম গোষ্ঠী এই আইনের বিরুদ্ধে কঠোর বিরোধিতা করেছে এবং সমাজের অনেকে গণভোটে এই আইনের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। তবুও সরকারের পক্ষ থেকে আইনটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এই আইন শুধু বোরখা নয়, সমস্ত ধরনের মুখ ঢাকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
এই নতুন আইনটি মূলত পাবলিক প্লেসগুলোতে মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ করে। তবে কিছু নির্দিষ্ট স্থানে এবং পরিস্থিতিতে এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। নিচে এই বিশেষ স্থান ও পরিস্থিতিগুলো বর্ণনা করা হলো:
বিমান, কূটনৈতিক ও কনস্যুলার এলাকা: এই আইনগুলো কার্যকর হবে না। এ ধরনের এলাকায় নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক কারণেই মুখ ঢাকার ক্ষেত্রে শিথিলতা রাখা হয়েছে।
ধর্মীয় ও পবিত্র স্থান: ধর্মীয় ও পবিত্র স্থানগুলোতে মানুষ ইচ্ছা করলে মুখ ঢাকতে পারবেন। এর মাধ্যমে ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যজনিত কারণ: স্বাস্থ্যগত কারণে মুখ ঢাকার প্রয়োজন হলে, যেমন: করোনা পরিস্থিতির মতো স্বাস্থ্য সংকটে মুখোশ বা মাস্ক পরা যাবে।
আবহাওয়াজনিত কারণ: কড়া শীত বা অন্য আবহাওয়াজনিত কারণে কেউ যদি মুখ ঢাকার প্রয়োজন অনুভব করেন, তবে তার জন্যও এই আইন শিথিল থাকবে।
বিনোদনের ক্ষেত্র: থিম পার্ক বা অন্য বিনোদনমূলক জায়গায় কোনো ব্যক্তি বিনোদনের অংশ হিসেবে মুখ ঢাকতে চাইলে তাতে কোনো বাধা নেই।
বিজ্ঞাপন বা সুরক্ষা কারণ: কোনো বিজ্ঞাপন বা বিজ্ঞাপনী কাজে মুখ ঢাকার দরকার হলে সেক্ষেত্রেও অনুমতি সাপেক্ষে মুখ ঢাকার অনুমতি দেওয়া হবে।
এছাড়া কোনো ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য কেউ মুখ ঢাকতে চাইলে তাকে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নিতে হবে।
সুইজারল্যান্ডের আইনটি গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হলেও দেশের মুসলিম সম্প্রদায় থেকে এর বিরোধিতা করা হয়। তাদের মতে, এই আইন মুসলিম নারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং তাদের ধর্মীয় পোশাক পরিধানের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে। আবার কিছু মানুষ এই আইনের বিরোধিতা করেছেন, কারণ তারা মনে করেন এটি একজন ব্যক্তির স্বাধীনতাকে হস্তক্ষেপ করছে।
অন্যদিকে, এই আইনটির পক্ষেও অনেকেই মতামত দিয়েছেন। তারা বলছেন, মুখ ঢাকা নিষিদ্ধকরণের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও সুরক্ষিত হবে এবং মুখ খোলা রেখে সবার সাথে যোগাযোগ সহজ হবে। কিছু মানুষ এই আইনকে সমাজে সমতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করছেন, যেখানে সবার জন্য একই ধরনের পোশাকবিধি মানা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
সুইজারল্যান্ডের মতো আরো অনেক দেশেই মুখ ঢাকার ওপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম ইতোমধ্যেই মুখ ঢাকার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সাধারণত মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর বেশি পড়ে, কারণ অনেক মুসলিম নারী বোরখা বা নিকাব পরেন, যা মুখ ঢাকতে ব্যবহৃত হয়। এসব নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেক নারী তাদের ধর্মীয় পোশাক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।