মতবিনিময় সভা না গোপন বৈঠক: পুলিশের দাবি বনাম ইউপি সদস্যদের যুক্তি
কক্সবাজারের একটি হোটেলে দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের সংগঠন, বাংলাদেশ ইউনিয়ন সদস্য সংস্থা (বাইসস)। সেখানে উপস্থিত থাকা ১৯ জন ইউপি সদস্যকে পুলিশ আটক করে, যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফইজুল আযীম নোমান। তিনি জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাদের আটক করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ইউপি সদস্যদের দাবি, এটি ছিল কেবলমাত্র তাদের নিজেদের সংগঠন, মেম্বার অ্যাসোসিয়েশন-এর এক সভা, যেখানে নানা মতাদর্শের জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মতে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিরা কীভাবে জনগণের জন্য কাজ করতে পারেন, সেই বিষয়েই সভায় আলোচনা করা হচ্ছিল।
—
গত শুক্রবার কক্সবাজারের একটি হোটেলে বাংলাদেশ ইউনিয়ন সদস্য সংস্থার (বাইসস) কক্সবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র সংস্কার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় উন্নয়নে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে জেলার প্রায় ৭০ জন ইউপি সদস্য উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের জনপ্রতিনিধিরা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে কীভাবে আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখা যায়, এ নিয়েই ওই সভায় আলোচনা চলছিল।
তবে সভা চলাকালে হঠাৎ করে পুলিশ এবং সমন্বয়করা উপস্থিত হয়ে হোটেলের হলরুম ঘিরে ফেলে। এরপর উপস্থিত ইউপি সদস্যদের পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই করে যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাদের আটকের সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. ফইজুল আযীম নোমান জানান, গোপন বৈঠক সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে অভিযান পরিচালিত হয়। তাদের কাছে আগে থেকেই গোপন সংবাদ ছিল যে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্য গোপনভাবে বৈঠক করছেন। তিনি আরও জানান, যাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই মামলা ছিল, কেবল তাদেরকেই আটক করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না, তাদেরকে যাচাই-বাছাই শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ইউপি সদস্যদের দাবি: কোনো গোপন বৈঠক নয়, এটি ছিল স্বাভাবিক মতবিনিময় সভা
আটক ইউপি সদস্যদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি কোনো গোপন বৈঠক ছিল না, বরং একটি সাধারণ সভা যেখানে সকলের মতামত শোনা হচ্ছিল। তাদের মতে, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য জেলার ইউপি সদস্যদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করা হয়েছিল। এর জন্য সড়কের পাশেই একটি হোটেলে সভার আয়োজন করা হয়। তারা এও বলেন, “যদি গোপন বৈঠক হতো, তবে এই রকম একটি প্রকাশ্য স্থানে, সড়কের পাশে এতো বড় আয়োজন করা হতো না।”
আটককৃত ইউপি সদস্যদের দ্রুত মুক্তি দাবি করে এক বিবৃতি দেন মেম্বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। তারা বলেন, এভাবে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি ও গ্রেপ্তার সাধারণ জনগণের জন্য ক্ষতিকর। আইন অনুযায়ী, কোনো মামলা ছাড়াই কাউকে এভাবে আটক করা ন্যায়সঙ্গত নয় বলে তারা মন্তব্য করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।