ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে প্রাণ হারালেন হিরালাল দেবনাথ, অভিযুক্ত প্রতিবেশী পলাতক
লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার কাজিরদীঘির পাড় এলাকায় হিরালাল দেবনাথ নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে, যা ইতিমধ্যে পুরো এলাকায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পুলিশ এ ঘটনাকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে সন্দেহ করছে এবং দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নিহত হিরালাল দেবনাথ সদর উপজেলার উত্তর হামছাদীর কাজিরদিঘীরপাড় এলাকার প্রপুল্ল কুমার দেবনাথের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজিরদিঘীরপাড় বাজারে মাতৃশিল্পালয় নামে একটি স্বর্ণের দোকান পরিচালনা করে আসছিলেন। প্রত্যেকদিনের মতো শুক্রবার রাতেও তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তার সাথে ছিলেন ছেলে প্রীতম দেবনাথ। বাড়ির নিকটে পৌঁছে ছেলেকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে সামনের দিকে পাঠানোর পর হিরালাল দেবনাথ দুর্বৃত্তদের দ্বারা আক্রান্ত হন। দুইটি ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
প্রীতম দেবনাথ তার বাবার উপর হামলা দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. কমলাশীষ জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে তার মৃত্যু হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পর, নিহতের ছেলে প্রীতম দেবনাথ অভিযোগ করেন যে, স্থানীয় কাপড়ের ব্যবসায়ী যতন দেবনাথ এই ঘটনার সাথে জড়িত। প্রীতমের দাবি, তার বাবার দোকানের সামনে প্রায়ই কাপড় ঝুলিয়ে রাখতেন যতন দেবনাথ, যা দোকানের সামনের এলাকায় অন্ধকার তৈরি করত। এই নিয়ে তাদের মাঝে প্রায়ই কথাকাটাকাটি হত, যা এক পর্যায়ে দ্বন্দ্বের রূপ নেয়। এই বিরোধের জের ধরে রাতের অন্ধকারে তার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রীতম ধারণা করছেন।
ঘটনার পর থেকে সন্দেহভাজন যতন দেবনাথ পলাতক রয়েছেন, যা তাকে এই হত্যাকাণ্ডে আরও সন্দেহভাজন করে তুলেছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মোন্নাফ বলেন, “আমরা ঘটনার তদন্ত করছি এবং দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। এই হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।” নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
অপরাধীকে দ্রুত গ্রেফতারের জন্য স্থানীয় পুলিশ একটি সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। এছাড়াও স্থানীয় জনগণকে সহায়তা করতে আহ্বান জানানো হয়েছে যাতে হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ দ্রুত উদঘাটিত হয়।
এই হত্যাকাণ্ডে কাজিরদিঘীরপাড় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং হিরালাল দেবনাথের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন। তবে এলাকাবাসীর একাংশের মধ্যে আতঙ্কও বিরাজ করছে, কারণ এই প্রথমবার নয় যে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে এমন ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটল।
এলাকার জনগণ ও বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন যে, অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।
এই হত্যাকাণ্ডের পর বাজার ও আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীরা। তারা উল্লেখ করেন যে, সম্প্রতি এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পুলিশি টহল জোরদার করার দাবি জানানো হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারে নয়, পুরো এলাকায় সন্ত্রাস ও ভীতির আবহ তৈরি করেছে।