ঢাকা, ৮ নভেম্বর: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, “ইসলাম, বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্ম ও জাতির সমন্বয়ে একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। সব ধর্মের মানুষ একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা ও সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।” গতকাল শুক্রবার ঢাকার মেরুল বাড্ডায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে পবিত্র কঠিন চীবর দান উৎসব ও জাতীয় বৌদ্ধধর্মীয় মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এই জাতীয় বৌদ্ধধর্মীয় মহাসম্মেলনে ধর্মীয় বোঝাপড়ার গুরুত্ব তুলে ধরে সেনাপ্রধান বলেন, “আজানের সময় ধর্মীয় সহমর্মিতা ও মমত্ববোধ যে দৃষ্টান্ত আমরা দেখেছি, তা অতুলনীয়। হাজার বছরের ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধান চার ধর্ম (সনাতন, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও ইসলাম) সহাবস্থানে রয়েছে, যা আমাদের সংস্কৃতির জন্য গর্বের বিষয়।” অনুষ্ঠানে ধর্মীয় সম্প্রীতির এমন উদাহরণ দেখিয়ে তিনি বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় সকলকে নিরাপত্তা দিতে সেনাবাহিনী সহায়তা করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।” সেনাপ্রধান এসময় পার্বত্য জেলা নিয়ে তার বক্তব্যে জানান, “পাহাড়ি ও বাঙালি জনগোষ্ঠী যেন একসঙ্গে সুন্দরভাবে সহাবস্থান করতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরি করতে সেনাবাহিনী সর্বদা সাহায্য করছে। আমরা চাই, পার্বত্য এলাকার ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনবৈচিত্র্য সংরক্ষণে সেনাবাহিনী যথাযথ ভূমিকা পালন করবে।”
সেনাপ্রধান আরও জানান, পার্বত্য এলাকায় পর্যটন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। এতে করে স্থানীয় অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং বাংলাদেশ পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হবে। তার মতে, এ অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করাও সেনাবাহিনীর কাজের অংশ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মাকাওয়াদি সুমিতমোর, ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ন্যুয়েন মান কুঅং এবং অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার নারদিয়া সিম্পসন। বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশের ধর্মীয় সহাবস্থানের প্রশংসা করেন এবং এ ধরনের ধর্মীয় উদযাপনে অংশগ্রহণ করতে পেরে নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন।
পবিত্র কঠিন চীবর দান উৎসবের সময় সেনাবাহিনীর প্রধানের এমন বক্তব্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রতিটি ধর্মের মানুষের সহমর্মিতা, সহাবস্থান এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ দেশকে আরও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করবে।