বাংলাদেশে ভারতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে জটিলতা বাড়ছে। কোম্পানিটি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়েছে, কারণ তারা ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বকেয়া পরিশোধ না পাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিডের দুই কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত আদানির ১৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। আগস্ট মাসেও এই কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে ১৪০০ থেকে ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল। তবে গত মাসের শুরুর দিকে আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে কমিয়ে আনেন, যা ৭০০-৭৫০ মেগাওয়াটের মধ্যে ছিল।
তবে গত বৃহস্পতিবার আরও একটি ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ওইদিন আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে মাত্র ৫২০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনে। বিদ্যুৎ সরবরাহে এই হ্রাসের ফলে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে চাপ বাড়ছে এবং এর ফলে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে।
আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বকেয়া অর্থ পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎ সরবরাহ কমানোর পদক্ষেপ নেয়। যদিও বাংলাদেশ সরকার ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য সময়সীমা বাড়িয়েছিল এবং একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য আলোচনা চলছিল।
তবে আদানি পাওয়ার তাদের পাওনা অর্থ না পেয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহে এই পরিবর্তন আনে। বিপিডিবির কর্মকর্তারা জানান, বকেয়া অর্থ পরিশোধের সময়সীমা বর্ধিত করলেও এবং ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করা হলেও আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহে সমন্বয় আনেনি।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, “আমরা ধীরে ধীরে বকেয়া পরিশোধের চেষ্টা করছি। কিন্তু যদি কেউ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নেব। তবে আমরা কোনো পাওয়ার কোম্পানিকে আমাদেরকে জিম্মি করতে দেব না।”
ফাওজুল কবিরের এই বক্তব্যে বোঝা যায়, বাংলাদেশ সরকার কোনোভাবেই বিদ্যুৎ সরবরাহের সংকটে অস্থির হতে চায় না এবং বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে সচেষ্ট। তবে আদানির মতো আন্তর্জাতিক কোম্পানি থেকে বিদ্যুৎ নেওয়ার সিদ্ধান্তে পুনর্বিবেচনা করার কথা ভাবছে সরকার।
আদানি পাওয়ারের কাছে বকেয়া পরিশোধ করতে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি ১৭০ মিলিয়ন ডলারের এলসি খুলেছে, যা বকেয়া পরিশোধে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এতেও আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় স্বাভাবিক হবে কি না তা নিশ্চিত নয়।
রয়টার্স এই বিষয়ে আদানির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ আদানি কর্তৃপক্ষ এখনও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য প্রদান করেনি।
এই বিদ্যুৎ সংকট বাংলাদেশে শিল্প এবং গৃহস্থালির জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। জাতীয় গ্রিডের উপর চাপ এবং বিভিন্ন অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার সন্ধান এবং অন্যান্য উৎসের সাথে চুক্তি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকার এখন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ভাবছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে নতুন চুক্তি করার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।
আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ সরবরাহ হ্রাস এবং পাওনা নিয়ে বিরোধ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলছে। এটি বাংলাদেশের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা ইতিবাচক পদক্ষেপ। আদানি পাওয়ারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করা এবং নতুন উৎস থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহের প্রচেষ্টা বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় অবদান রাখতে পারে।