প্রকাশিত তারিখ: ১৩ আগস্ট ২০২৪, সকলের কণ্ঠ
কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবির কর্মসূচি চলাকালে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। এমনকি তৎকালীন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকও সরাসরি ফোন করে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারি সংস্থাগুলো ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে জনসম্মুখে কিছু স্বীকার করেনি। তবে বিভিন্ন সময়ে জুনাইদ আহ্মেদ পলক এই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি ইন্টারনেট অবকাঠামোতে অগ্নিসংযোগের বিষয়টি সামনে এনেছিলেন।
ইন্টারনেট বন্ধের সময়সূচি:
২০২৪ সালের ১৭ জুলাই রাতে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়, এবং পরদিন ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ হয়ে যায়। টানা পাঁচ দিন ইন্টারনেট বন্ধ ছিল, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ১০ দিন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবা ১৩ দিন বন্ধ ছিল।
সরকারি নির্দেশনা ও প্রতিক্রিয়া:
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৫ জুলাই রাতে বিটিআরসি থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
১৮ জুলাই বিটিআরসি ব্যান্ডউইডথ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়, যা ৯টার মধ্যে কার্যকর করা হয়। এনটিএমসি থেকে মোবাইল অপারেটরদের ই-মেইল করে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, ভাইবার, ইমো, ইউটিউবসহ অন্যান্য সেবা বন্ধ করতে বলা হয়।
বিতর্ক ও সমালোচনা:
ইন্টারনেট বন্ধের কারণে দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা এই পদক্ষেপকে মৌলিক অধিকার খর্ব করার সাথে তুলনা করেছেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মো. সাইমুম রেজা তালুকদার বলেছেন, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির পরিপন্থী।
পরবর্তী ঘটনা:
সরকারের পতনের পর, ৬ আগস্ট দেশ ছাড়তে গেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। এরপর তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এই ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনাটি দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য, সরকারি-বেসরকারি অফিসের কার্যক্রমসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক ক্ষতি করেছে বলে আইআইজিএবির মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ মন্তব্য করেছেন।
শেষ কথা:
এই ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনাটি জনগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে অনেকের কাছে বিবেচিত হয়েছে। এর ফলে দেশের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।