ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়িয়েও কেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না মূল্যস্ফীতি?
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দাম ও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি দেশের স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে, অক্টোবরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। তাছাড়া খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রার ব্যয়কে বাড়িয়ে তুলছে।
বিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে পৌঁছেছে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এর ফলে, সাধারণ মানুষ, বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রয়ক্ষমতা হারাচ্ছে। অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে পৌঁছানো একটি উদ্বেগজনক চিত্র উপস্থাপন করে, যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ। এছাড়া জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে পৌঁছায়, যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
মূল্যস্ফীতির এ ঊর্ধ্বগতির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হওয়া বন্যা দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং পরবর্তীতে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলকে প্রভাবিত করেছে। এতে ব্যাপক কৃষিজমি ডুবে ফসল নষ্ট হয়েছে, যার ফলে খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, খাদ্য পণ্যের উৎপাদন হ্রাস ও সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি দ্রুতগতিতে বেড়েছে।
বাংলাদেশে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে সিন্ডিকেট ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করা যায়। কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী পণ্যের বাজার নিজেদের হাতে রাখে, ফলে তারা দাম নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। যদিও সরকার বারবার পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে, কিন্তু সিন্ডিকেটের প্রভাবের কারণে চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি হয় এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকঋণের সুদহার কয়েক ধাপে বাড়ানো হয়েছে, যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং বাজারে টাকার সরবরাহ কমানো যায়। সুদহার বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতির চাহিদা কিছুটা হ্রাস পেলেও খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে সরবরাহ শৃঙ্খল নিয়ন্ত্রণ না থাকলে কেবল সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানাবিধ পদক্ষেপ নিচ্ছে। খাদ্য আমদানি বাড়ানো, পরিবহন খরচ কমানো এবং পণ্য পরিবহনের জন্য জরুরি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে সিন্ডিকেটের ওপর কঠোর নজরদারি এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণও এই পরিস্থিতি সামলাতে অপরিহার্য।