২০০৭ সালের ৩০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তৎকালীন উপদেষ্টা পরিষদ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৭তম পরীক্ষার প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করে। বাতিলকৃত ফলাফলের পর পিএসসি দ্বিতীয়বারের মতো মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ প্রায় ১,১৩৭ জন প্রার্থী চাকরি থেকে বাদ পড়েন। দীর্ঘ ১৬ বছর পরে, এই ভুক্তভোগীদের মামলা আপিল বিভাগে গড়িয়েছে, যা নতুন করে তাদের কর্মজীবন ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছে।
২০০৫ সালের ২৮ জুন, পিএসসি ২৭তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এই বিসিএস পরীক্ষার প্রাথমিক ও লিখিত ধাপ পেরিয়ে ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৩,৫৬৭ জন প্রার্থী। কিন্তু এক এগারোর সময়, সরকারি নীতির আওতায় উপদেষ্টা পরিষদ প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় এবং পিএসসি এই নির্দেশ অনুযায়ী ১ জুলাই সেই ফলাফল বাতিল করে। পরে ২৯ জুলাই নতুন করে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ৩,২২৯ জন প্রার্থী এবং তাদের নিয়োগ প্রদান করা হয়। এই সিদ্ধান্তে বাদ পড়েন ১,১৩৭ জন প্রার্থী।
নিজেদের চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় এই বাদপড়া প্রার্থীরা আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। প্রথমে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে তাদের অধিকারের দাবি জানান। দীর্ঘ ১৬ বছরের আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন তারা। অবশেষে, ২০২৩ সালে আপিল বিভাগ তাদের মামলা পুনর্বিবেচনার জন্য গ্রহণ করে।
আপিল বিভাগের রায় এবং ভুক্তভোগীদের আশার আলো
২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৪ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ বাদপড়া ভুক্তভোগীদের রিভিউ শুনানির অনুমতি প্রদান করে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তাদের চাকরি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এই রায়ের পর ভুক্তভোগীদের মধ্যে একটি নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে আইনি লড়াইয়ের পর এই ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ তাদের জন্য স্বস্তি নিয়ে এসেছে।
এই রায়ের মাধ্যমে ২৭তম বিসিএসের বাদপড়া প্রার্থীরা কর্মজীবনে পুনরায় প্রবেশের সম্ভাবনা তৈরি করেছেন। বিষয়টি সমাজের বিভিন্ন স্তরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক ন্যায়বিচারের এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে পরিগণিত হবে।
দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া এবং নানান চড়াই-উৎরাইয়ের পর, এক এগারোর সময়কার প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমান আপিল বিভাগের এই সিদ্ধান্ত ভুক্তভোগী প্রার্থীদের জন্য নতুন জীবন ও কর্মক্ষেত্র ফিরে পাওয়ার দ্বার উন্মুক্ত করতে পারে।