বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বহুল আলোচিত আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি পুনর্বিবেচনা কিংবা বাতিলের দাবি জানিয়ে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী। ৬ নভেম্বর বুধবার, সকালে ডাকযোগে এ নোটিশটি প্রেরণ করেন ব্যারিস্টার এম কাইয়ুম। দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে আদানির সঙ্গে করা ‘অন্যায্য ও একতরফা’ চুক্তিটি অবিলম্বে পুনর্মূল্যায়ন বা বাতিলের দাবি উত্থাপন করেছেন তিনি।
নোটিশে বলা হয়েছে, আদানির সঙ্গে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির ফলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বিশাল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আইনজীবী কাইয়ুম উল্লেখ করেন, এ ধরনের একতরফা চুক্তির কারণে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের ওপর আর্থিক বোঝা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই চুক্তিটি পুনর্বিবেচনা না করা হলে তিনদিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
তাছাড়া, নোটিশে দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠনের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। এই কমিটি চুক্তির বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করার পরামর্শও প্রদান করা হয়েছে। এই লিগ্যাল নোটিশের জবাব দেয়ার জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তিনদিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।
২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের তৎকালীন বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সম্পন্ন করা হয়। সে সময়ে দেশের আমদানি করা কয়লানির্ভর কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়নি, অথচ তাড়াহুড়ো করে এই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছিল। চুক্তি অনুসারে ভারতের ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত আদানি গ্রুপের ১,৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করা হবে।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ জাতীয় পর্যালোচনা কমিটির সভায় ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য ও নথি পর্যালোচনা কমিটিকে সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের তরফ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বেশ কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বাংলাদেশে বিদ্যুতের খরচকে বাড়িয়ে তুলেছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়লা আমদানি এবং পরিবহন খরচ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বহন করার কথা বলা হয়েছে। এ কারণে বিদ্যুৎ খাতের ওপর আর্থিক বোঝা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ ব্যয়ের তুলনায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে স্বল্পমেয়াদি চাহিদা পূরণের জন্যে চুক্তিটি অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছে।
দেশের জ্বালানি খাতের বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চুক্তিটি একতরফা এবং দেশের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। তারা উল্লেখ করেন, চুক্তিটি পুনর্বিবেচনা করে নতুন করে আলোচনা না করলে বিদ্যুৎ খাতের ভবিষ্যত উন্নয়ন ও টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।
জাতীয় পর্যালোচনা কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের সকল নথি ও তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের কাজ চলমান রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ এই কমিটিকে প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করতে পারলে দেশের আর্থিক স্বার্থ সুরক্ষিত হতে পারে।
বিদ্যুৎ খাতের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই চুক্তি পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে। তারা উল্লেখ করেন, আদানি চুক্তি বাতিল কিংবা পুনর্বিবেচনার দাবির ন্যায্যতা রয়েছে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
লিগ্যাল নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবি ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আইনজীবী এম কাইয়ুম উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পর্যালোচনা কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিষয়টি নিরীক্ষা করে সুনির্দিষ্ট পর্যালোচনা রিপোর্ট দেয়ার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।
এই লিগ্যাল নোটিশের মাধ্যমে আদানি চুক্তির সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে।