যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে এবং এখন একে একে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে ফলাফল আসতে শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে যেকোনো প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৭০টি ভোট অর্জন করতে হবে। সবশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন পর্যন্ত ২০৭টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন, যেখানে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ৯১টি ইলেকটোরাল ভোট। দেশটির জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমগুলো এই ভোটের ফলাফল প্রকাশ করছে। এর মধ্যে বিবিসির খবরে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৫০টি অঙ্গরাজ্যে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হয় এই ভোটগ্রহণ। এর মধ্যে ৪৩টি রাজ্যই রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত। তবে নির্বাচনের জয়-পরাজয় নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে সাতটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য। যেখানে প্রার্থী দুজনের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছে। এসব অঙ্গরাজ্যের ফলাফল নির্ধারণ করবে কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট।
নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্তরের নির্বাচন হলেও বাস্তবে জয়ী-পরাজিত নির্ধারিত হয় অঙ্গরাজ্যগুলোর নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমে। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে প্রাপ্ত ভোট অনুসারে ইলেকটোরাল ভোট ভাগাভাগি হয়। মূলত এই পদ্ধতির মাধ্যমেই নির্ধারণ হয় কাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করা হবে। বিশেষ করে, মাইন ও নেব্রাসকা ব্যতীত, প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে বিজয়ী প্রার্থী ওই অঙ্গরাজ্যের সবকটি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থার অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান নির্ধারণ হয় ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ সিস্টেমের মাধ্যমে। নির্বাচনে দেওয়া ভোট অনুসারে মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোট আছে। যেসব অঙ্গরাজ্য সাধারণত ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান সমর্থকদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত, সেগুলোর ভোট অতি দ্রুত নির্ধারণ হয়ে যায়। কিন্তু দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে ফলাফল প্রকাশ হতে সময় লাগে, এবং সেখানেই দুই পক্ষের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়ে থাকে।
এবারের নির্বাচনে সাতটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের গুরুত্ব
এবারের নির্বাচনে বড় ভূমিকা পালন করছে দোদুল্যমান সাতটি অঙ্গরাজ্য—অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন, নর্থ ক্যারোলাইনা ও নেভাদা। বিশ্লেষকদের মতে, এসব অঙ্গরাজ্যের ফলাফলই চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করবে আগামী প্রেসিডেন্ট কে হবেন।
এই নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিশন হলো তার বর্তমান অবস্থান ধরে রেখে আবারও প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়া। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে থাকার পর এবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই প্রার্থীদের মধ্যে চলমান প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের ফলাফলের জন্য আমেরিকান জনগণ এবং সারা বিশ্বের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকটোরাল কলেজ সিস্টেম পৃথিবীর অন্যান্য দেশের থেকে আলাদা। নির্বাচনের জন্য ভোটাররা সরাসরি রাষ্ট্রপ্রধানকে ভোট দেন না। বরং, প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে প্রাপ্ত সাধারণ ভোটের ভিত্তিতে ইলেকটোরাল ভোট বরাদ্দ হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদ্ধতি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
বর্তমান তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন রাজ্যে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যাচ্ছেন। ট্রাম্পের পক্ষে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য ইলেকটোরাল ভোট দিয়েছেন, যার ফলে তার প্রাপ্ত মোট ইলেকটোরাল ভোট সংখ্যা বেড়ে ২০৭ হয়েছে। অন্যদিকে, কমলা হ্যারিস এখনও অনেক রাজ্যের ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয় বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। বিশেষ করে বিশ্বরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ভূমিকা থাকার কারণে অন্যান্য দেশগুলোর কাছে এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট যে কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃবিবেচনা করতে পারেন, যা বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করছে এই দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর উপর, যেখানে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।