বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অবশেষে নিশ্চিত করল সেই গুঞ্জন, যা বেশ কিছুদিন ধরে ক্রিকেট মহলে শোনা যাচ্ছিল। দেশের জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে টাইগারদের সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিসিবির আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়, সালাউদ্দিন ২০২৫ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করবেন।
মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের কোচিং অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে বহুল আলোচিত এবং প্রশংসিত। ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় দলের সহকারী কোচ ছিলেন। এছাড়া, ২০১০-১১ সালে বিসিবির ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমিতে বিশেষজ্ঞ কোচ হিসেবে কাজ করেছেন।
এখানেই শেষ নয়, সালাউদ্দিনের কোচিং ক্যারিয়ার আন্তর্জাতিক পরিসরেও বিস্তৃত। ২০১৪ সালে তিনি সিঙ্গাপুর জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া, অস্ট্রেলিয়ায় এসিসি লেভেল-৩ কোচিং সনদ অর্জনকারী এই কোচ ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। বিপিএল এবং ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সালাউদ্দিনের সাফল্য সর্বজনবিদিত। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বিপিএলে শিরোপা জিতিয়েছেন এবং দলকে অন্যতম সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সালাউদ্দিনের জাতীয় দলে ফেরার আলোচনা শুরু হয় চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বিদায়ের পর থেকে। বিসিবি তখন থেকে একটি নির্ভরযোগ্য সহকারী কোচের সন্ধানে ছিল, যিনি প্রধান কোচের সঙ্গে সমন্বয় করে দলকে এগিয়ে নিতে পারবেন। যদিও পরে ফিল সিমন্স প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন, সহকারী কোচের পদে সালাউদ্দিনের নাম বিবেচনায় আসে। বিসিবির এক পরিচালক জানান, বোর্ডের অভ্যন্তরীণ আলোচনা শেষে সালাউদ্দিনকে সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।
বিসিবির সূত্রমতে, সালাউদ্দিন আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ শুরু করবেন। তার ভিসার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জেই নতুন দায়িত্বের শুরু করবেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর নিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, “দলের সঙ্গে যোগ দিতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমার কাজ হবে প্রধান কোচের সঙ্গে সমন্বয় করে দলকে শক্তিশালী করা এবং খেলোয়াড়দের মানসিক এবং টেকনিক্যাল দিক থেকে প্রস্তুত করা।”
সালাউদ্দিনের নিয়োগে দলের মধ্যে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। তার অভিজ্ঞতা এবং কৌশলগত চিন্তাভাবনা দলের জন্য সহায়ক হবে। তবে, সালাউদ্দিনের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে যাচ্ছে। জাতীয় দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনা রয়েছে, এবং তার দায়িত্ব হবে দলের মধ্যে নতুন উদ্যম সঞ্চার করা।
বিসিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “সালাউদ্দিনের নিয়োগ আমাদের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। তিনি ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। আশা করছি, তার অভিজ্ঞতা আমাদের জাতীয় দলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।”
জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও সালাউদ্দিনের নিয়োগে সন্তুষ্ট। একজন সিনিয়র ক্রিকেটার বলেন, “সালাউদ্দিন স্যারের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ। তিনি সবসময় খেলোয়াড়দের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করেন এবং তাদের উন্নতির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। তার পরামর্শ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
আরেকজন তরুণ ক্রিকেটার বলেন, “তিনি একজন দুর্দান্ত কৌশলী এবং মানসিকতার দিক থেকে খুব শক্তিশালী। তার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারব।”
সালাউদ্দিন তার দায়িত্বকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমার লক্ষ্য হবে দলের সামগ্রিক উন্নতি নিশ্চিত করা। খেলোয়াড়দের ফিটনেস, টেকনিক এবং মানসিকতা উন্নত করার জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করব। আমাদের সামনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ এবং টুর্নামেন্ট রয়েছে, এবং আমরা সেগুলোতে ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, “সালাউদ্দিনের নিয়োগ আমাদের কোচিং স্টাফকে আরও শক্তিশালী করবে। তার অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলি দলের জন্য মূল্যবান হবে। আমরা আশা করছি, তার নেতৃত্বে দল নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।”
মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তার অভিজ্ঞতা এবং কৌশলগত দক্ষতা দলের জন্য একটি সম্পদ হয়ে উঠবে। আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর এবং পরবর্তী চ্যালেঞ্জগুলোতে তার ভূমিকা নির্ধারক হতে পারে। ক্রিকেটপ্রেমীরা আশাবাদী যে, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করবে।