বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি স্পষ্ট হলেও, সরকার আগে স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়।
সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। তবে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে আয়োজন নিয়ে বিভাজন রয়েছে। সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, নির্বাচন সংস্কার কমিশন এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য পুরনো পদ্ধতি অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠনের কারণ হলো সরকার আন্তরিকভাবে নির্বাচন নিয়ে কাজ করছে। জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে একটি পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দলীয় প্রতীক বাতিল করা হবে বলে সূত্র জানায়।
সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি কতটা সম্মত হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিএনপি ইতোমধ্যেই স্পষ্ট করেছে যে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন হলে তারা বিরোধিতা করবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতে, সরকারকে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একজন সদস্য বলেন, “সরকার তো আওয়ামী লীগের সরকার নয়, এটা অন্তর্বর্তী সরকার।” বিএনপি মনে করছে, স্থানীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হতে পারে।
অন্যদিকে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, নির্বাচনি প্রক্রিয়া এবং সংস্কারের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ, পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, এবং নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের সংবিধান সংস্কার নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা এই বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। মির্জা আব্বাস বলেন, “সংবিধান কোনও রাফ খাতা নয় যে যা খুশি তাই করা যাবে। সংবিধান সংশোধন কিংবা পুনর্লিখন করতে হলে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।”
ড. কামাল হোসেনও এই বিষয়ে মত দিয়েছেন যে, “কোনও ব্যক্তি কলমের খোঁচায় সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে না। জনগণের মতামত নিতে হবে।”
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সরকারের সেবা থেকে বঞ্চিত। এই নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব করা উচিত।”
স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে দিলে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বজায় থাকবে এবং এটি সরকারের একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা থেকে যাবে।
সরকার জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও, এই প্রক্রিয়া সরকারের আন্তরিকতারই বহিঃপ্রকাশ। তবে, জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সংবিধান সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের আরও স্বচ্ছতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে সরকারকে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।