ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটা এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও, খেলার কোটা বাতিলের প্রস্তাবও এই নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষারসহ চারজন আইনজীবী এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।
আইনি নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার। তার সঙ্গে আরও তিনজন আইনজীবী রয়েছেন— ব্যারিস্টার মাহদী জামান বনি, অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, এবং অ্যাডভোকেট শাহেদ সিদ্দিকী। নোটিশটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি (প্রশাসন), প্রো-ভিসি (শিক্ষা), এবং রেজিস্ট্রারের কাছে ইমেইলের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের ‘সন্তানদের’ জন্য ৫ শতাংশ কোটা বহাল থাকবে। এছাড়া, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য যথাক্রমে ১ শতাংশ কোটা বজায় রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে নাতি-নাতনি কোটা, পোষ্য কোটা এবং খেলার কোটা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। নোটিশে এসব কোটাকে অপ্রয়োজনীয় এবং বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে এই সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা না নেয়া হলে, বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিট দায়েরসহ অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আইনি নোটিশে উল্লেখ করা হয় যে, বর্তমান কোটাব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রে মেধার বিপরীতে অবস্থান করছে। নাতি-নাতনি ও পোষ্য কোটা চালু রাখলে সাধারণ ছাত্রদের মেধা ও প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ কমে যায়। এছাড়া, কোটা পদ্ধতি সংস্কারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সমতাভিত্তিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে বলে মনে করছেন নোটিশদাতারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণির জন্য কোটা ব্যবস্থা বহুদিন ধরেই প্রচলিত। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনি কোটা, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পোষ্য কোটা, এবং খেলার কোটা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মেধার ভিত্তিতে ভর্তির দাবিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কারের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে। বিশেষত, মেধাবী শিক্ষার্থীরা মনে করছেন যে কোটা পদ্ধতি মেধার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এতে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে।
কোটা সংস্কারের প্রস্তাব দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত বিষয়। অনেকে মনে করেন, কোটা ব্যবস্থা থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রবেশের সুযোগ কমে যায়। অন্যদিকে, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা মনে করেন, তাদের জন্য কোটা থাকা উচিত, কারণ এটি তাদের প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ।
এই নোটিশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতির সংস্কারকে সমর্থন করলেও, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের শিক্ষার্থীরা এর বিরোধিতা করছেন। তাদের মতে, মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের অবদানকে সম্মান জানাতে কোটা রাখা উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সূত্র জানিয়েছে যে, নোটিশের বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
কোটা পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। নাতি-নাতনি ও পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে পাঠানো আইনি নোটিশ সেই বিতর্ককে আরও গভীর করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তা সময়ই বলে দেবে। শিক্ষার্থী ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের মধ্যে এই বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। ঢাবি কর্তৃপক্ষ কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা নিয়ে সবার মধ্যে কৌতূহল বাড়ছে।