বর্ষীয়ান অভিনেতার ঘোষণা: “নতুন কিছু না হলে আমি অভিনয় করব না”
ভারতীয় বাংলা সিনেমার বর্ষীয়ান অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এই সিদ্ধান্তের পিছনে শারীরিক অসুস্থতা নয়, বরং অভিনয় করার মতো চরিত্রের অভাব রয়েছে। ৬৮ বছর বয়সী এই অভিনেতা সম্প্রতি আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তার অবসর গ্রহণের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
আলাপচারিতার শুরুতে সব্যসাচী জানান, “এখন ভালোই আছি, তাই তো শুটিং করছি। তবে এক মাস আগে আমার স্ত্রীর ক্যানসারের অস্ত্রোপচার হয়েছে। তারপরেই আমার পালস ছিল ৩৪! বুকে পেসমেকার বসানো হয়েছে। ডাক্তার জানালেন, তিন মাস বিশ্রামে থাকতে হবে।” তার এই বক্তব্যে তিনি পরিষ্কার করেছেন যে, তার শারীরিক অসুস্থতা অভিনয় থেকে অবসরের কারণ নয়।
সব্যসাচী চক্রবর্তী উল্লেখ করেছেন যে, অভিনয় করার মতো নতুন চরিত্রের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, “মধ্য বয়সী বা বয়স্ক চরিত্রের প্রস্তাব আসছে, তবে সেগুলো প্রায় একই ধরনের। আমি নতুন কিছু চাই, তাই অভিনয় করব না।”
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “ফেলুদার বাইরেও তো চরিত্র রয়েছে। আমাকে বলা হয়, ‘আপনি না থাকলে সিনেমাটা হবে না।’ কিন্তু প্রশ্নের পর প্রশ্ন আসলে দেখা যায়, তাদের কাছে হিরোর বাবার চরিত্রই থাকে। আমার যুক্তি হচ্ছে, যদি নতুন কিছু না হয়, তাহলে আমি অভিনয় করব না।”
সব্যসাচী চক্রবর্তীর ক্যারিয়ারের শুরু ১৯৯২ সালে। তিনি প্রথমে ‘তেরো পার্বন’ টিভি সিরিয়ালের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের দর্শকদের কাছে পরিচিত হন। পরে ‘রুদ্রসেনের ডায়েরি’ সিরিয়ালে প্রথম গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
তিনি সত্যজিৎ রায়ের ‘ফেলুদা’ চরিত্রের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তার অভিনীত সিনেমার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘অন্তর্ধান’, ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন’, ‘তিনকাহন’, ‘হেমলক সোসাইটি’, ‘থানা থেকে আসছি’, ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’, ‘ল্যাবরেটরি’, ‘গোরস্থানে সাবধান’, ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ প্রভৃতি।
অভিনয়ের পাশাপাশি, সব্যসাচী চক্রবর্তী প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি তার ভালোবাসার জন্য পরিচিত। তিনি একজন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার হিসেবেও কাজ করেন, যা তার জীবনের একটি বিশেষ দিক।
সব্যসাচী চক্রবর্তীর অভিনয় থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত বাংলা চলচ্চিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি। তার অবসর গ্রহণের পেছনে নতুন চরিত্রের অভাবের কথা জানানো একটি উদ্বেগজনক বিষয়, যা বাংলা সিনেমা জগতে নতুন মুখ ও চরিত্রের প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করে। তার অভিনীত সিনেমাগুলো আজও দর্শকদের মনে প্রভাব বিস্তার করে আছে এবং তার ক্যারিয়ার ভবিষ্যতে অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।