অভিযান চালিয়ে ১৭টি কচ্ছপ উদ্ধার, বন বিভাগসহ স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয়
পটুয়াখালীর গলাচিপায় কচ্ছপ পাচারের দায়ে সুখলাল বিশ্বাস নামে একজনকে আটক করেছে বন বিভাগ। সোমবার (৪ নভেম্বর) সকালে উপকূলীয় বন বিভাগের পরিচালনায় অভিযানে ১৭টি বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাসিম রেজা সুখলালকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
অভিযানটি সোমবার সকালে বন্যাতলী খেয়াঘাটে পরিচালনা করা হয়, যেখানে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাচারকারীকে আটক করা হয়। বন বিভাগের কর্মীদের নেতৃত্বে স্থানীয় সংস্থা ‘এ্যানিমল লেভার্স অব পটুয়াখালী’র প্রতিনিধি মো. রাসেল এবং বন বিভাগের বোটম্যান মো. নাঈম হোসেন খানের সহযোগিতায় এই অভিযান পরিচালিত হয়।
আটককৃত সুখলাল বিশ্বাস গলাচিপার চরকাজল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শৈলেন বিশ্বাসের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপ পাচার করে আসছেন। এদিনের অভিযানে ১৭টি কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়, যা বিভিন্ন প্রজাতির ছিল।
বিচারক মো. নাসিম রেজা আদালতে শুনানির পর সুখলালকে বন্য সংরক্ষণ আইন, ২০১২ এর ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আটক ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় শাস্তি প্রদান করা হয়, যা পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় সরকারের কঠোর অবস্থানের প্রতিফলন।
আটকের পর সুখলাল বিশ্বাস দাবি করেন, “আমি পাচারকারীর সদস্য নই। আমার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়রা কচ্ছপ খাওয়ার জন্য বলেছিল। তাই বরিশাল যাচ্ছিলাম।” তার এ বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
গলাচিপা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সুখলাল বিশ্বাস ২০১৮ সালে কচ্ছপ পাচারের অভিযোগে র্যাবের হাতে ধরা পড়েছিলেন এবং ১৮ দিন কারাগারে কাটিয়েছিলেন। বর্তমান অভিযানে পুনরায় আটক হওয়া এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের মনোযোগ প্রয়োজন।
অভিযানে উদ্ধার করা কচ্ছপগুলোকে দুপুরের দিকে গলাচিপার রাবনাবাদ নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এই কচ্ছপগুলো অবমুক্ত করার ফলে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এমন ঘটনা সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্বকে তুলে ধরে। বন্যপ্রাণী পাচার প্রতিরোধে এবং পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয় জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। বিশেষ করে কচ্ছপের মতো প্রজাতি সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ তারা প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
গলাচিপা একটি উপকূলীয় অঞ্চল, যেখানে বন্যপ্রাণী ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা নিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপ, ডলফিন, পাখি এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী বাস করে। এর ফলে এলাকার পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বন বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসন এর আগে থেকেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিশেষ নজর দিচ্ছে। নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করা হচ্ছে।
পটুয়াখালীর গলাচিপায় কচ্ছপ পাচারের ঘটনাটি আমাদের দেখায় যে, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ একটি গুরুতর সমস্যা। সুখলাল বিশ্বাসের মতো পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত জরুরি। আশা করা হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন এবং বন বিভাগ এ বিষয়ে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায় এবং আমাদের পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষা করা সম্ভব হয়।
এতে আরও গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে যে, স্থানীয় সম্প্রদায়কে এই ধরনের পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে হবে এবং তাদের সহযোগিতা করতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সম্ভব এবং আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা যাবে।
এছাড়া, এ ধরনের অভিযান এবং আইনি পদক্ষেপ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।