যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একদিন বাকি: ট্রাম্প ও হ্যারিসের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি মাত্র একদিন, আর এই শেষ সময়ে এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের মধ্যকার লড়াই অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শেষ মুহূর্তের জরিপে দেখা গেছে, এই দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান খুবই সামান্য, এবং রাজ্যগুলোতে জনসমর্থন প্রায় সমান। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনমতের এই সন্নিকটে অবস্থা উভয় প্রার্থীকে আরও সতর্ক করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে বেশ কিছু বিষয় রয়েছে যা এই নির্বাচনের ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান ইস্যু হলো অর্থনীতি। অনেক ভোটার মনে করেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতির সমস্যার সমাধান করতে ট্রাম্পের নীতিগুলো কার্যকরী হতে পারে। ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতটা উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়নি। আমেরিকান জনগণ উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়ের কারণে উদ্বিগ্ন, যা ট্রাম্পের জন্য সমর্থন জোগাতে সহায়ক হতে পারে। নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প এই পরিস্থিতির ওপর জোর দিয়ে বলেছিলেন, “আপনি কি চার বছর আগের চেয়ে এখন ভালো আছেন?” তাঁর সমর্থকরা বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতিগুলো ব্যবসা-বান্ধব এবং কর হ্রাসমূলক, যা মধ্যবিত্ত ও ব্যবসায়ী শ্রেণির সমর্থন আদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক মার্কিন নাগরিক মনে করেন, বিশ্বে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ট্রাম্প প্রশাসন কার্যকর ছিল। কোভিড-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক সংকট এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন দেশে ক্ষমতাসীন দলের পতন ঘটেছে, এবং এই প্রবণতাটি যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। জরিপ অনুযায়ী, মাত্র এক-চতুর্থাংশ আমেরিকানরা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট, যা ট্রাম্পের জন্য একটি সুবিধাজনক অবস্থা তৈরি করেছে।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিলে ঘটে যাওয়া দাঙ্গাসহ বিভিন্ন অভিযোগ সত্ত্বেও, ট্রাম্প এখনও তার সমর্থন ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ডেমোক্র্যাট এবং রক্ষণশীলরা যেখানে ট্রাম্পকে অযোগ্য মনে করেন, সেখানে অনেক রিপাবলিকান বিশ্বাস করেন তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। এই ঘটনাটি ভোটারদের একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে।
অবৈধ অভিবাসন সম্পর্কে ট্রাম্পের সতর্কবার্তা অনেক নাগরিকের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। জরিপ অনুযায়ী, অভিবাসনের বিষয়ে ট্রাম্পের ওপর জনসাধারণের বিশ্বাস বেশি। মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্পের কড়া অবস্থান অনেক আমেরিকান ভোটারের মধ্যে প্রশংসা অর্জন করেছে। এছাড়া, ট্রাম্পের শাসনামলে বিশ্বে কোনও বড় যুদ্ধ শুরু হয়নি, যা তাঁর সমর্থন বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
দুই প্রার্থীর মধ্যে হ্যারিস সামান্য হলেও এগিয়ে রয়েছেন। জো বাইডেন নির্বাচনে না দাঁড়ানোর পর ডেমোক্র্যাট শিবিরে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন কমলা হ্যারিস। কলেজ-শিক্ষিত ও বয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে হ্যারিসের প্রতি ব্যাপক সমর্থন রয়েছে, যা তার বিজয়ে সহায়ক হতে পারে।
হ্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছেন, যা তরুণ প্রজন্ম এবং পরিবেশপ্রেমী ভোটারদের কাছে তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। তরুণদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুটি গুরুত্বপূর্ণ, এবং হ্যারিসের এই বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা তাকে অনেক ভোটারদের সমর্থন দিতে পারে।
প্রথম নারী, কৃষ্ণাঙ্গ এবং দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে হ্যারিসের অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈচিত্র্যপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যে তার পরিচয় ও অবস্থান তাকে ভোটারদের কাছে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে পারে।
মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের রো ভি. ওয়েড মামলায় গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল হওয়ার পর এটিই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, এবং গর্ভপাতের অধিকার রক্ষায় হ্যারিসের অবস্থান তাকে সমর্থন জোগাতে পারে। অতীতের নির্বাচনে দেখা গেছে যে গর্ভপাতের অধিকার ইস্যুটি নির্বাচনী ফলাফলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। হ্যারিসের পক্ষে নারী ভোটারদের সমর্থন তার জয় নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে।
এটা কোন গোপন বিষয় নয় যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অত্যন্ত ব্যয়বহুল, এবং চলতি নির্বাচন এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচনের পথে রয়েছে। প্রার্থীদের ব্যয়ের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন কমলা হ্যারিস। সাম্প্রতিক ফিনান্সিয়াল টাইমসের এক বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০২৩ সালের জানুয়ারির পর থেকে হ্যারিস নির্বাচনী ব্যয়ে ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে গেছেন, যা তার নির্বাচনী প্রচারণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের জন্য সফলতার মূল চ্যালেঞ্জ হলো বিভিন্ন ভোটার গোষ্ঠীর মধ্যে গভীর সংযোগ স্থাপন করা এবং তাদের প্রত্যাশা ও সমস্যার যথাযথ প্রতিফলন ঘটানো। দুই প্রার্থীরই জয়ের সম্ভাবনা নির্ভর করছে জনগণের বর্তমান সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতির ওপর এবং সেই প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর।
নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য প্রার্থীদের দক্ষ নির্বাচনী প্রচারণা, জনগণের আবেগ ও প্রত্যাশার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা এবং সঠিকভাবে সমাধান প্রদানের পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।